করোনা মহামারি শুরুর প্রায় ৩ বছরের মাথায় এসে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এর মাত্রা অনেকটা লোপ পেলেও চীনের অবস্থা বেশ ব্যতিক্রম। অর্থাৎ চীনে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসার পর চীনে দিনকে দিন বাড়ছে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে চলতি শীতে এই সংখ্যায় উল্লম্ফন ঘটবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চীনের মহামারিবিদ উয়ো জুনইউ’র মতে, চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত করোনার অন্তত তিন ঢেউ আঘাত হানবে দেশটিতে। এই পরিস্থিতিতে চীনের করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে উয়ো জুনইউ বলেন, বর্তমানে একটি করোনার ঢেউ শুরু হয়েছে দেশটিতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত তা চলবে। তারপর মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আরও দু’টি ঢেউ আসার সমূহ আশঙ্কা আছে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউটি শুরু হবে ২০ জানুয়ারির পর। কারণ ওই দিন থেকে চীনের নতুন চান্দ্র বছরের শুরু এবং নতুন বছর উদযাপন হবে টানা কয়েকদিন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নতুন বছরের আনন্দ ভাগ করে নিতে দেশ-বিদেশে অবস্থান করা চীনের নাগরিকরা বাড়ি ফেরা শুরু করবেন এবং এই বিপুল-সংখ্যক মানুষের যাওয়া-আসা থেকেই সৃষ্টি হবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।
তৃতীয় ঢেউও শুরু হবে এই নতুন চান্দ্র বছর ঘিরেই, ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রথমার্ধে। সে সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনের পর নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরা শুরু করবে।
অবশ্য চীন এই সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা অর্থনীতির আকারের কারণে দেশটিতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় বলে স্থানীয় সময় সোমবার মন্তব্য করেছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস। একইসঙ্গে চীন কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের আশার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের দৈনিক ব্রিফিংয়ে প্রাইস বলেন, ‘চীনের জিডিপির আকার এবং চীনের অর্থনীতির আকারের পরিপ্রেক্ষিতে ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বের বাকি অংশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-এর বিরুদ্ধে চীনের শক্তিশালী অবস্থানে থাকা কেবল দেশটির জন্যই ভালো নয়, এটি বাকি বিশ্বের জন্যও ভালো।’
প্রাইস বলেন, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকায় এটির রূপান্তর এবং সেটির মাধ্যমে সর্বত্র হুমকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা বিভিন্ন ভাবে এই ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি এবং এই কারণে আমরা বিশ্বজুড়ে দেশগুলোকে কোভিড মোকাবিলায় সহায়তা করার দিকে এতো মনোযোগ দিচ্ছি।’
এদিকে ভাইরাস-বিরোধী কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার পর চীনে করোনাভাইরাসে প্রথম প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার দেশটির সরকার এই ভাইরাসে দু’জনের প্রাণ গেছে বলে জানায়। যদিও চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।
এর আগে দেশজুড়ে জারি করা কঠোর করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লোকজনের তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৩ ডিসেম্বর চীনের সরকার ‘জিরো-কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। প্রায় তিন বছর ধরে কোভিড বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে অভিযোগ করে দেশটির নাগরিকরা চীনজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
সর্বশেষ দু’জনের মৃত্যুসহ করোনা মহামারির শুরু থেকে চীনে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৩৭ জনের কোভিড-সম্পর্কিত প্রাণহানি হয়েছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে এই সংখ্যা বেশ ক্ষুদ্র বলেই মনে করা হয়।
এসডব্লিউএসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ