এখনও কোভিড-১৯ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি বিশ্ব। এরইমধ্যে নতুন আরেকটি ভাইরাস তৈরিতে লেগে পড়েছে চীন। অভিযোগ উঠেছে, বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানের একটি ল্যাবে এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফার্স্টপোস্ট এমন একটি রিপোর্ট লিখেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়া হয়েছে- ‘রাওয়ালপিন্ডির ল্যাবে চীন ও পাকিস্তানের নতুন বায়ো অস্ত্রের গবেষণা’।
এরপরই বিষয়টি নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যেই কোভিড মহামারি বিশ্বকে থমকে দিয়েছিল, তার উৎপত্তিও হয়েছে চীন থেকেই। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশটির উহানে প্রথম কোভিড ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আস্তে আস্তে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে যায় এই ভাইরাস।
সেই সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, উহানের একটি ল্যাবে এই ভাইরাস তৈরি করা হয়েছিল। সেসময় এ নিয়ে নানা তদন্তও হয়েছিল।
তবে চীন শেষ পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ দাবি করে গেছে। এবার দেশটির বিরুদ্ধে আবারও একই ধরণের অভিযোগ উঠলো।
সূত্রের বরাত দিয়ে ফার্স্টপোস্ট জানিয়েছে, এবার আর নিজ দেশে নয় বরঞ্চ বন্ধু দেশ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটি ল্যাবে এই গবেষণা চালাচ্ছে চীন। এই দুই দেশ মিলে নতুন একটি ভাইরাস তৈরি করছে, যা কোভিড-১৯-এর থেকেও ভয়াবহ হবে।
এ জন্য চীনের উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি এবং পাকিস্তানের ডিফেন্স সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি অরগানাইজেশন (ডিএসটিও)একটি বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা সেনানিবাসে থাকা পরীক্ষাগারটি অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায় রয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ২ জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা।
সংবাদ মাধ্যমের দাবি, কোভিডের মতোই একটি ভয়াবহ ভাইরাস তৈরি করছে চীন। পাকিস্তানে তা তৈরি হচ্ছে এবং এই ভাইরাস করোনার থেকেও বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আর এ নিয়েই নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিশেষজ্ঞদের কপালে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬২ কোটিরও বেশি মানুষ।
এরমধ্যে যদি নতুন কোনো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা গোটা মানবজাতির জন্যেই হবে বিপর্যয়কর। যদিও এই যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। ডিএসটিও এই ধরনের কোনও ল্যাব চালাচ্ছে না বলে স্পষ্ট অস্বীকার করেছে দেশটি।
প্রথম যখন কোভিড ছড়ায় তখন ২০২০ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, তাদের কোনও গোপন প্রকল্প নেই। তাছাড়া তাদের বায়ো সেটফি লেভেল-৩ ল্যাবরেটরি সম্পর্কেও গোপন করার কিছু নেই।
যদিও কিছু বায়ো ওয়েপন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের ল্যাবগুলো সে দেশের সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। আবার চীনের ল্যাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি। মূলত এই দুই দেশের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ল্যাবগুলোই যৌথভাবে বিভিন্ন ভাইরাস পরীক্ষা করে চলেছে।
এই ভাইরাসগুলিকে জৈব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে তারা। এর আগেও চীনের ল্যাবগুলোতে তদন্ত চালিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে তাতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর তারা আবারও একই তদন্ত করতে চেয়েছিল। তবে সেবার আপত্তি তোলে বেইজিং।
এর আগে চীনে পশুর দেহ থেকে উৎপত্তি এমন একটি নতুন ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন চীন ও সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাস মানুষকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। চীনের দুটি প্রদেশে এই ভাইরাস আবিষ্কার করা হয়েছে। নতুন এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে বলে এ খবর দিয়েছে অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস।
গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন এই ভাইরাস পশুর দেহে পাওয়া গেছে। নিপাহ ভাইরাসের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। জ্বরজাতীয় কিছু অসুখের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এর কারণ অজ্ঞাত। লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, অবসন্নতা, কাশি, ক্ষুধামন্দা, পেশীতে ব্যথা এবং বমি বমি ভাব।
এসব তথ্য ৪ঠা আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে। তাতে বলা হয়েছিল, চীনের দক্ষিণের প্রদেশ শ্যানডোং এবং মধ্যাঞ্চলীয় হেনান প্রদেশে এই ভাইরাসে কমপক্ষে ৩৫ জন আক্রান্তের রেকর্ড পাওয়া গেছে।
ওই গবেষণার লেখকরা এর নাম দিয়েছেন ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাস বা সংক্ষেপে লেভি। গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন রোগীর সোয়াপ বা গলা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে আলাদা করা হয়েছে হেনিপাভাইরাস। এর নাম দেয়া হয়েছে লেভি। চীনের শ্যানডোং এবং হেনান প্রদেশে লেভি সংক্রমণে আক্রান্ত ৩৫ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন শুধু লেভি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও তাদের দেহে অন্য কোনো প্যাথোজেন পাওয়া যায়নি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ