৫০০ কোটি বছর বয়সী পৃথিবীতে পরিবর্তন হয়েছে অজস্র। আর এর মধ্যে আছে পাখিরাও। পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই ডাইনোসরদের বসবাস। অনেক গবেষকের মতে, বিরাট আয়তনের এই সরীসৃপ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তাদের বিশাল আকৃতির জন্যই।
মহাকাশ থেকে ছুটে আসা এক বিরাট উল্কাখণ্ডের আঘাতে এক লহমায় বদলে গিয়েছিল পৃথিবীর চেহারা। ডাইনোসর ছাড়াও আরও অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সেই ঘটনায়।
সেই দুঃসময় পেরিয়ে অনেক প্রাণী বেঁচেও ছিল। বিবর্তনের নিয়মই তো তাই। বদলে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে জীবজগৎ বদলে নেয় নিজের প্রকৃতিও। ডাইনোসরের সমসাময়িক কালে পৃথিবীতে বাস করত বেশ কিছু পাখি। তাদের আকারও ছিল ডাইনোসরের মতোই বৃহৎ।
তবে পাখিদের অস্তিত্ব মুছে যায়নি। আর তাই আজও গাছে গাছে অসংখ্য পাখি ঘুরে বেড়ায়। যেভাবে ডাইনোররের অস্তিত্ব রয়েছে টিকটিকির মধ্যে। তেমনিই ছোট্ট আকৃতির পাখির মধ্যেই তাদের বংশ রক্ষা হচ্ছে এখনো। তবে কীভাবে বেঁচে ছিল তারা? এটি বিজ্ঞানের কাছে আজও অনেক বড় এক বিস্ময়।
এই নিয়ে গবেষণাও চলে বিস্তর। অনেক নতুন নতুন তথ্যও উঠে আসে সেইসব গবেষণা থেকে। সম্প্রতি কিছু জীববিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্ত্বিকের মিলিত গবেষণায় উঠে এল পাখির বিবর্তন সংক্রান্ত অদ্ভুত এক তথ্য। এই গবেষণায় ছিলেন বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কেপকা ও তার সহযোগীরা।
অনেকেই খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, পাখিদের মস্তিষ্কের আয়তনের তুলনায় তাদের শরীর বেশ ছোট। অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। কিছু পাখি তো রীতিমতো পতঙ্গের আকারের। পাখিদের অভিব্যক্তির এই আশ্চর্য দিকটির কারণ সহজে বুঝতে পারতেন না অনেকেই।
গবেষণায় দেখা গেল, এই অদ্ভুত অভিব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের এক ইতিহাস। যখন ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর বুক থেকে।
ডাইনোসরের সমসাময়িক যেসব পাখির জীবাশ্ম পাওয়া যায় তাদের আয়তন বিশাল। অথচ দ্রুত সেই চেহারা বদলাতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায় আজকের পাখিদের মতো আকৃতি ধারণ করেছে তারা। তবে এমনটা ঘটল কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে জীবাশ্মের মধ্যে থাকা করোটির সিটি স্ক্যান করলেন বিজ্ঞানীরা।
জীবাশ্মে মস্তিষ্ক থেকে না। তবে করোটি স্ক্যান করে মস্তিষ্কের আয়তন বুঝতে পারলেন বিজ্ঞানীরা। আর দেখা গেল, সেই আয়তন আজকের পাখিদের তুলনায় খুব বেশি বড় নয়। অর্থাৎ অভিব্যক্তির ফলে পাখিদের কেবল দেহের আয়তনই কমেছে। মস্তিষ্কের আয়তন যা ছিল প্রায় তাই রয়েছে।
পাখিদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তেমন চর্চা হয় না বললেই চলে। অথচ এই ছোট প্রাণীর নানা আচরণ অবাক করে অনেককেই। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখে এই পাখিরা। কোনো বিপর্যয় ঘটলেও আগে থেকে টের পায় তারা। পাখিদের এই ব্যবহারের পিছনে প্রকৃত কারণ কী, সেকথা আজও রহস্যের মধ্যেই ঢাকা।
তবে প্রকৃতিকে এতটা কাছ থেকে দেখে বলেই তারা বদলে নিতে পেরেছিল নিজেদের। বিবর্তনের ইতিহাস এমন ঘটনা সত্যিই আশ্চর্যজনক
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ