মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল ইরানে বিক্ষোভ দমনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, দুই কিশোরীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পুলিশ।
নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরও বদলায়নি বাহিনীটি। উল্টো বিক্ষোভে অংশ নেয়া কিশোরীদের পিটিয়ে হত্যা করছে, নাক কেটে ফেলার মতো বর্বরতাও করছে তারা।
মিররের প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাতে বলা হয়েছে, ইরানের নৈতিকতা পুলিশ সদস্যরা দুই কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী সারিনা ইসমাইলজাদেহকে লাঠি (ব্যাটন) দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে বিক্ষোভ চলাকালীন নৈতিকতা পুলিশের অফিসাররাই তাকে আঘাত করেন।
আঘাতে তার মাথার খুলি চূর্ণ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। এদিকে আরেক ১৭ বছর বয়সী কিশোরী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া নিকা শাকরামি নিখোঁজ ছিলেন। শুরুতে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ।
পরে তার মৃতদেহ ফিরিয়ে দিলে দেখা যায় তার নাক কেটে ফেলা হয়েছিল এবং মাথায় ২৯টি আঘাতের চিহ্ন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে এমন মানুষদের ক্ষতি বা হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা কয়েক দশকের দমন ও অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমেছে।’
তবে মাহসার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলনকে ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েল ও আমেরিকার চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তবে বাস্তবতা এমনটি নয়। ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
একেবারে শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ইরানি নারীরা।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অন্তত ৯২ জনের মৃত্যু
ইরানে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলা বিক্ষোভকালে অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছে। ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গত রোববার এ কথা জানিয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক আমিনীর (২২) মৃত্যুর পর দেশজুড়ে হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিক্ষোভ নারীদের হলেও পুরুষেরাও এতে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া, শনিবার পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় দেড়শো শহরে ইরানী নারীদের আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
অসলো ভিত্তিক আইএইচআর বলেছে, বিক্ষোভে অংশ নেয়া অন্তত ৯২ জন প্রাণ হারিয়েছে। সংস্থাটি ইন্টারনেট ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে কাজ করছে। তবে, এর আগে লন্ডন ভিত্তিক অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫৩ জনের প্রাণহানির খবর জানিয়েছিল।
গত সপ্তাহে ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এজেন্সি বলেছিল, বিক্ষোভে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছে।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। মাশা আমিনীর হিজাব ঠিকমতো পরা হয়নি এ কারণ দেখিয়ে নৈতিকতা পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশী হেফাজতেই সে মারা যায়। এরপর থেকে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকালে ইরানী নারীরা হিজাব পুড়িয়ে, নিজেদের চুল কেটে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, দরিদ্র অঞ্চল সিস্তান-বেলুচিস্তানের পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে একজন বেলুচ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগের কারনে ওই এলাকায় বিক্ষোভ তীব্র রূপ নেয়। শুক্রবার ওই এলাকায় রিভ্যুলিশনারি গার্ডের পাঁচ সদস্য নিহত হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ