দিন দিন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হচ্ছে আফগানিস্তানে। ভেঙে পড়া অর্থনীতি, অদক্ষ প্রশাসন আর উপর্যুপরি হামলায় গৃহযুদ্ধের যুগে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে দেশটি। মানুষের মুখে খাবার নেই, কর্মসংস্থান নেই, আছে শুধু মৃত্যু আর ধর্ম। এসবের মধ্যেই প্রায় প্রতি শুক্রবার জুমার দিনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে জঙ্গিরা।
এরই ধারাহিকতায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। জুম্মার নামাজের পর এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। খবর এএফপি, রয়টার্সের
কাবুল পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জাদরান বলেন, নামাজের পর মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। হতাহতদের সঠিক সংখ্যা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক।
স্থানীয় একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর তাদের কাছে ১৪ জনকে নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে চারজন পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন।
জানা গেছে, বিস্ফোরণটি ঘটেছে ‘গ্রিন জোন’ নামে পরিচিত ওয়াজির আকবর খান এলাকায়। সেখানে অনেক বিদেশি দূতাবাস ও ন্যাটোর দপ্তর অবস্থিত। এলাকাটি এখন ক্ষমতাসীন তালিবান নিয়ন্ত্রণ করে।
আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল নাফি টাকোর বলেছেন, মসজিদের কাছে প্রধান সড়কে বিস্ফোরণটি ঘটে। এর কারণ তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণটি ঘটেছে একটি ম্যাগনেটিক বোমার কারণে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা অযাচাইকৃত ছবিতে মসজিদের বাইরের রাস্তায় একটি গাড়িকে আগুনে পুড়তে দেখা গেছে।
এখন পর্যন্ত কেউ এ বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি। তবে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে এ ধরনের বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
২০২০ সালে একই মসজিদে একটি বোমা বিস্ফোরণে মসজিদের ইমাম নিহত হয়েছিলেন।
তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে আফগানিস্তান জুড়ে সামগ্রিক সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও কাবুল এবং অন্যান্য শহরে নিয়মিত বোমা হামলা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে রুশ দূতাবাসের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত জঙ্গিপ্রবণ আফগানিস্তানে হাজারারা নিষ্পেষিত— এ কথা প্রমাণ দিয়ে বলা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে, আফগানিস্তানে আসলে কারা সুরক্ষিত? কেউ নয়। জোর দিয়ে বলা যায়, যত দিন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ না হবে, ততদিন শান্তি ফিরবে না আফগান মুল্লুকে। আর ততদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না হাজারারা। ফলে শান্তির জন্য আফগানিস্তানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বহু বিভক্ত আফগানিস্তানে সেই সম্প্রীতি কবে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪২
আপনার মতামত জানানঃ