১৯৯০-এর দশকে তালিবানের প্রথম শাসনমেয়াদে নারীদের জন্য কঠোর সব বিধিনিষেধ জারি ছিল। নারীদের কাছ থেকে প্রায় সব অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করার পর নিজেদের পূর্ববর্তী কঠোর নীতি নমনীয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালিবান। তবে প্রতিশ্রুতি রাখেনি তালিবান। আফগানিস্তানের সামাজিক জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে নারীরা।
আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার এবং তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। সেখানে নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে।
বুধবার (২০ জুলাই) জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্ট জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে নারী এবং শিশুদের উপর হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে।
ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন আফগানিস্তান (ইউএনএএমএ)-এর প্রকাশিত ওই রিপোর্ট জানিয়েছে, গত ১০ মাসের তালিবান ক্ষমতা দখলের পর সংখ্যালঘুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ (আইএসকে)। সামগ্রিকভাবে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, ২০১৬ জন। এর মধ্যে ৭০০ জনেরও বেশি নিহত এবং বাকিরা গুরুতর আহত হয়েছেন।
গত ১৫ অগস্ট কাবুলে তালিবানদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পরে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে ওই রিপোর্টে।
রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে জুন মাসে কাবুলের গুরুদ্বারে আইএসকে-র হামলার প্রসঙ্গ। ওই হামলায় এক শিখ ব্যক্তি-সহ দু’জন নিহত হয়েছিলেন।
রিপোর্ট প্রকাশ করে তালিবান সরাকারের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, মেয়েদের মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউএনএএমএ-র প্রধান মার্কোস পটজেল।
গত ১০ মাসের তালিবান ক্ষমতা দখলের পর সংখ্যালঘুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ (আইএসকে)। সামগ্রিকভাবে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, ২০১৬ জন। এর মধ্যে ৭০০ জনেরও বেশি নিহত এবং বাকিরা গুরুতর আহত হয়েছেন।
তালিবানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন আফগানিস্তানে বসবাসরত শিয়া মতাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের শঙ্কা ছিল, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলের মতো যদি তারা আবার জাতিগত নিগ্রহের শিকার হয়!
আফগানিস্তানের প্রতাপশালী পশতুন জনগণ হাজারাদের কখনো তাদের সমতুল্য মনে করতে পারেনি। হাজারারা শিয়া। পশতুনরা সুন্নি। ধর্মকেন্দ্রীক এ মতভেদ এবং হাজারাদের নিজস্ব জীবন ব্যবস্থার কারণে কখনো আফগানিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে পারেনি সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগানিস্তানে খুবই অল্প পরিমাণ শিখ বাস করেন। তালিবান ফের ক্ষমতায় আসার সময় অনেকে দেশটি ছেড়ে চলেও গেছেন বলে সম্প্রদায়টির অনেক সদস্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে এসেছে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে বৈষম্য এবং হয়রানীর শিকার।
আফগানিস্তানের অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতো শিখরাও লাগাতার সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২০২০ সালে কাবুলে তাদের অন্য একটি মন্দিরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলা ২৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত জঙ্গিপ্রবণ আফগানিস্তানে হাজারারা নিষ্পেষিত— এ কথা প্রমাণ দিয়ে বলা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে, আফগানিস্তানে আসলে কারা সুরক্ষিত? কেউ নয়। জোর দিয়ে বলা যায়, যত দিন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ না হবে, ততদিন শান্তি ফিরবে না আফগান মুল্লুকে। আর ততদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না হাজারারা। ফলে শান্তির জন্য আফগানিস্তানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বহু বিভক্ত আফগানিস্তানে সেই সম্প্রীতি কবে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
তালিবানরা এবার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন অনেক আফগান নাগরিক। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তালিবান সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান বা আইএস-কে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৬
আপনার মতামত জানানঃ