কক্সবাজারের পেকুয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও সরকারের মন্ত্রীদের কথিত কটূক্তির অভিযোগে বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পেকুয়া থানায় মামলাটি করেন। মামলায় পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন, মগনামা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের হেলালি ও মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল কবির।
মামলার বাদী আবুল কাশেম বলেন, গত শনিবার বিকেলে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের নিচতলায় ইউনিয়ন মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ দলকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন। বক্তব্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্রী ভাষায় কটূক্তি করেন। মামলার অপর আসামিদের যোগসাজশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে দাঁড়িয়ে তার এ ধৃষ্টতা দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ। তাই সরকারপ্রধানকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে এই মামলা করেছি।
এদিকে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী দাবি করেন, পরিষদ ভবনে বিএনপির এ রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। ব্যক্তিগত কাজে তিনি ওই দিন কক্সবাজার অবস্থান করছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক আমাকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীদের দিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে থানায় একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এজাহার করা হয়েছে। এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতারাই যদি কথা বলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কথা বলবে কীভাবে? ডিএসএর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুক্তভাবে তথ্য, কথা আদান-প্রদানের যে জায়গা ছিল, তা সংকুচিত হয়ে গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে কথিত কটূক্তির মামলায় বগুড়ায় বিএনপি নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
রোববার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নাকচ করে রনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার।
সুরাইয়া জেরিন রনি বগুড়া মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বিএনপির সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনির বিরুদ্ধে।
রনির ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ২৯ মে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ। তাদের ওই কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষও বাধে। পরে ৩১ মে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি ও গাবতলীতে আওয়ামী লীগের ওপর হামলার ঘটনায় সুরাইয়া জেরিন রনিসহ ১৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন গাবতলী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার পাইকার।
সেই মামলায় জামিন নিতে গেলে রনিকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
এর আগে গত ১৪ জুলাই একই মামলায় আরও তিন বিএনপি নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই তিন নেতা হলেন গাবতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন, সদস্য হারুনুর রশিদ ও ফজলে রাব্বী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নানাভাবে খর্ব হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কী মানুষের আছে? রাজনৈতিক দলের নেতারাই যদি কথা বলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কথা বলবে কীভাবে? ডিএসএর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুক্তভাবে তথ্য, কথা আদান-প্রদানের যে জায়গা ছিল, তা সংকুচিত হয়ে গেছে।
তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ