আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি শিখ মন্দির গুরুদুয়ারায় দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং একাধিক গুলির শব্দ শোনা গেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি বিস্ফোরণের একটি ঘটেছে কাবুলের কার্তে পারওয়ান এলাকায় অবস্থিত শিখদের উপাসনালয় গুরুদুয়ারার সামনে।
স্থানীয় সময় শনিবার(১৮জুন) সকালের ওই বিস্ফোরণে ঠিক কতজন হতাহত হয়েছে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
ঘটনাস্থল থেকে গোরনাম সিং নামের এক স্থানীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ওই মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন প্রায় ৩০ জন। সে সময়ই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, ঠিক কতজন মারা গেছেন বা কতজন বেঁচে আছেন আমরা তা জানি না।
তিনি আরও বলেন, তালিবানের সদস্যরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই আমরা জানি না যে, এখন আমরা কি করব।
স্থানীয় প্রচারমাধ্যম টোলো বেশ কিছু ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে চারদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
কাবুলে অবস্থিত শেষ শিখ মন্দির এটি। এই সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, দেশটিতে বর্তমানে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১৪০। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় লাখের কাছাকাছি।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগানিস্তানে খুবই অল্প পরিমাণ শিখ বাস করেন। তালিবান ফের ক্ষমতায় আসার সময় অনেকে দেশটি ছেড়ে চলেও গেছেন বলে সম্প্রদায়টির অনেক সদস্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে এসেছে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে বৈষম্য এবং হয়রানীর শিকার।
দেশটিতে বর্তমানে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১৪০। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় লাখের কাছাকাছি।
আফগানিস্তানের অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতো শিখরাও লাগাতার সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২০২০ সালে কাবুলে তাদের অন্য একটি মন্দিরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলা ২৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
আই এস দাবী করে তারা ২০১৮ সালের জুলাই মাসে জালালাবাদ শহরে শিখ এবং হিন্দুদের সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা এবং ২০ জনকে আহত করে।
আওতার সিং খালসা, আফগানিস্তানের সব চেয়ে পরিচিত শিখ রাজনীতিকদের অন্যতম, সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন।
তালিবান গত বছর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে এটি সর্বশেষ হামলা। এর আগে ডিসেম্বরে একটি সামরিক হাসপাতালে হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল ১৬ জন।
এপ্রিলে মসজিদে গ্রেনেড নিক্ষেপের পর ছয়জন নিহত হন। পরে ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স (আইএসআইএস-কে) এ হামলার দায় স্বীকার করে।
তালিবান বলছে, তারা আইএসকে পরাজিত করেছে। কিন্তু গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের কাছে একটি গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএস দাবি করেছিল, মাজার-ই-শরিফ মসজিদে হামলায় তারা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরিত বুবি-ট্র্যাপড ব্যাগ ব্যবহার করেছে। গোষ্ঠীটির সাবেক নেতা ও মুখপাত্রকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। বাকি তিনটি হামলার বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
দ্বিতীয় হামলাটি হয়েছিল কুন্দুজের একটি পুলিশ স্টেশনের কাছে। গাড়িতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে অন্তত চারজন প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন ১৮ জন।
পূর্ব নাঙ্গারহার প্রদেশের একটি রাস্তায় হয় তৃতীয় হামলা। তালেবানের গাড়িতে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন চারজন। একজনের অবস্থা গুরুতর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ হামলা তালিবান সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। বিদেশী বাহিনী চলে যাওয়ার পর গত আগস্টেই তারা ক্ষমতা বুঝে নেয়। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তালিবান সরকার-সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বেশ কয়েকজন আইএস নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো অনেক সন্দেহভাজনকে হত্যা করা হয়েছে। তার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগ করা হচ্ছে না।
তালিবানরা এবার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন অনেক আফগান নাগরিক। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তালিবান সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান বা আইএস-কে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ