বাংলাদেশের সরকার মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেবার পর তার কঠোর সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
জুনের পাঁচ তারিখ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আবেদন বাতিল করা হয়।
এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত মানবাধিকার রক্ষায় যারা কাজ করে তাদের কণ্ঠ রোধ করা এবং ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা। সংস্থাটি আরও বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে তথ্য রাখা এর বিচারে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অ্যামনেস্টি বলছে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের খুব দুর্বল রেকর্ডের কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। আর এ নিয়ে তথ্য প্রকাশ করার কারণে নিবন্ধন নবায়ন না করার বিষয়টি হাস্যকর এবং অধিকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রতি সরকারের ক্ষোভের প্রকাশ বলে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি। অবিলম্বে সংগঠনটির কাজের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেছেন, “একটি মানবাধিকার সংস্থার কাজ এবং প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে সেই সংস্থাটির নিবন্ধন নবায়ন না করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ধরনের তথ্য বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রকাশ করে, সেই অভিযোগগুলোকে যথাযথ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরা। অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করার অর্থ হল মানবাধিকার এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি একটি ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের লক্ষণ।”
সরকার তার কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অধিকার এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে কোন হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার সুযোগ দেবে এমন দাবি করেছেন তিনি।
যে কারণ এনজিও ব্যুরোর এই সিদ্ধান্ত
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তারিকুল ইসলাম বলছেন, সংগঠনটির কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়, তাই নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী দশ বছরের কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে আবেদন নবায়ন হয়। তাদের পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া নবায়নের যে আবেদন করেছে তার ফি দেয়নি, কম দিয়েছে। যে কাগজপত্র দেবার কথা ছিল তা দেয়নি। তাদের অডিট রিপোর্ট গৃহীত হয়নি। সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটা দেয়নি। তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করেছে। যার তালিকা চাওয়া হয়েছিল সেটা তারা দেয়নি। এসব কারণে নিবন্ধন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যা বলছে অধিকারের কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নিখোঁজ এসকল বিষয়ে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কাজ করে আসছিল অধিকার।
গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটি বেশ চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশি অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংগঠনটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
অধিকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২০১৪ সালে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করা হয়েছিল। সংগঠনটি অভিযোগ করছে তাদের তরফ থেকে সকল কাগজপত্র জমা দেবার পরও নিবন্ধন নবায়নের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে অধিকার-এর পক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। অধিকারের পক্ষে সেই রিটের আইনজীবী রুহুল আমিন ভুঁইয়া জানিয়েছেন, “আমাদের করা রিটের শুনানই এখনো চলছে। আজও তার শুনানি ছিল। নিবন্ধন তারা এদিন ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ যখন একটা মামলা শুনানি চলছে সেই অবস্থায় তারা নিবন্ধনের আবেদন বাতিল করেছে।”
“আমরা সব নথিপত্র দিয়েছি। পরবর্তীতে তারা নতুন করে যা চেয়েছে, ক্লারিফিকেশন, অডিট রিপোর্ট সবই আমরা দিয়েছি। এমনকি নবায়ন ফি যে বৃদ্ধি করা হয়েছে, প্রথমে ছিল দশ হাজার টাকা পরে করা হয়েছে পনেরো, চাওয়ার সাথে সাথে আমরা দিয়েছি।”
মি ভুঁইয়া জানিয়েছেন এনজিও ব্যুরোর এই সিদ্ধান্তকে তারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ