চীনের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সরকার। গত ১৪ এপ্রিল ওই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয় বেইজিং, যা সলোমন দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এটা বড় ধাক্কা। দ্বীপদেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছেন লড়াইয়ে।
এর মধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া চুক্তিটি নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এই চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা সেনাবাহিনীকে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
চীনের অর্থায়নে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে নির্মিত হয়েছে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স। জানা গেছে, এই কমপ্লেক্স তৈরিতে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচ হয়েছে। ২০২৩ সালে এই কমপ্লেক্সেই প্রথমবারের মতো প্যাসিফিক গেমস আয়োজন করবে দেশটি।
চীনের সঙ্গে করা এ চুক্তির একটি খসড়া গত মাসে ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সরকারের অনুরোধে চীন দেশটিতে সশস্ত্র পুলিশ ও সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে। চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির উপকূলে তার নৌবাহিনীর জাহাজ রাখার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
চুক্তির খসড়াটি ফাঁস হলে পুরো অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে খসড়ায় সলোমন দ্বীপপুঞ্জে চীনের নৌবাহিনী মোতায়েনের কথা থাকায় বিষয়টি এত গুরুত্ব পায়। চুক্তিটি ঠেকাতে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। সলোমন থেকে অস্ট্রেলিয়ার দূরত্ব দুই হাজার কিলোমিটারের কম।
অস্ট্রেলিয়া আশংকা করছে যে, তাদের সীমান্তের অদূরে একটি চীনা সামরিক ঘাঁটি ‘অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হুমকি হবে’। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা চুক্তির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং জাপানের মন্ত্রিপরিষদের প্রধান সচিব বলেছেন, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সরকারের অনুরোধে চীন দেশটিতে সশস্ত্র পুলিশ ও সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে। চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির উপকূলে তার নৌবাহিনীর জাহাজ রাখার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে ‘অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে সামান্যতম পরামর্শ ছাড়াই রহস্যজনক ও অস্পষ্ট চুক্তির প্রস্তাব’ করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে চীনের একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা সম্পর্কে তারা অবগত। এই চুক্তিটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটিতে চীনা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনার আশঙ্কাকে নতুন করে চাঙ্গা করেছে।
হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা এই চুক্তির স্বচ্ছতার অভাব এবং এর প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে উদ্বিগ্ন। এই চুক্তির সঙ্গে চীনের ছোট আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে মৎস আহরণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহায়তা এবং এখন নিরাপত্তা অনুশীলনের মতো চিরায়ত অস্পষ্ট চুক্তির প্রস্তাবের মিল রয়েছে’।
চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ বলেছেন, সলোমনের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা অন্য কোনো পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলো যেমন সলোমন দ্বীপপুঞ্জ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করতে পারে, তেমনি তাদের অন্য দেশের সঙ্গেও চুক্তি করার অধিকার আছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সকলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, চীন-সলোমন চুক্তি বেইজিংয়ের বছরের পর বছর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বল্প জনবহুল এবং প্রায়শই দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে চীনা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পথ সুগম করবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৪
আপনার মতামত জানানঃ