আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একদিন তারাও শিশু ছিলেন। তাই শিশুদের নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো খোদ মাদ্রাসাশিক্ষক তথা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদের বিরুদ্ধে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা থানায় অভিযোগ দেয়ার পর থেকেই সস্ত্রীক আত্মগোপনে আছেন আবু সাদ নামের ওই শিক্ষক।
অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাদ শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের জাহাজঘাটা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি কালীগঞ্জের জাফরপুর গ্রামে একটি বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে তিনি হেফজখানা পরিচালনা করে আসছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা জানান, আট মাস আগে তার ১১ বছর বয়সী ছেলেকে আবু সাদের হেফজখানায় ভর্তি করেছিলেন। ভর্তি করার কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ছেলেকে গভীর রাতে কৌশলে শৌচাগারে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করতেন আবু সাদ। বিষয়টি কাউকে জানালে খুন করার ভয় দেখানো হতো শিশুটিকে।
ভর্তি করার কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ছেলেকে গভীর রাতে কৌশলে শৌচাগারে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করতেন আবু সাদ। বিষয়টি কাউকে জানালে খুন করার ভয় দেখানো হতো শিশুটিকে।
যৌন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত বুধবার ধর্ষণের বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায় ভুক্তভোগী শিশু। পরে স্থানীয় তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শে ছেলেকে নিয়ে থানায় যান তিনি। কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বিস্তারিত জানার পর উপপরিদর্শক আবু সাঈদকে জাফরপুর গ্রামে পাঠান। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে যান ওই শিক্ষক।
ওই শিক্ষক বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আগেও অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা।
এ বিষয়ে বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার বৈদ্য জানান, বিষয়টি তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। তবে কেউ যদি শিক্ষক আবু সাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই ওসির সঙ্গে কথা বলে ভুক্তভোগী ও তার বাবাকে থানায় পাঠান তিনি।
থানা সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিশুটির বাবা শুক্রবার সকালে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, মাদ্রাসাগুলোয় দিনের পর দিন ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চললেও তা বন্ধে এখনও তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বিপথগামী কিছু শিক্ষক ও মাদ্রাসাসংশ্নিষ্টরা এটাকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দেন জড়িতরা। আবার ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে রেখে তা ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে শিশুদের জিম্মি করার ঘটনাও রয়েছে।
তারা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
তারা বলেন, এমন ঘটনা অনেক হচ্ছে, তবে তা জানা যাচ্ছে কম। যখন কেউ মারা যায় বা নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তখনই কেবল তা প্রকাশ্যে আসে। মাদ্রাসা বোর্ডকে এ ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। কেন এসব ঘটছে তা খুঁজে বের করতে হবে। জড়িতদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪২
আপনার মতামত জানানঃ