ভোলার বোরহানউদ্দিনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় অভিযুক্ত বাপন দাস নামের এক যুবককে পৃথক পৃথক ধারায় মোট ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ফেসবুক হ্যাক করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মামলায় কারাদণ্ড দিয়েছে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল। রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম ফারুক এ রায় দেন।
দণ্ডিত আসামি বাপন দাস (২৭) কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চাচুয়া গ্রামের বিকাশ দাসের ছেলে। রায়ের সময় বাপন দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসতাক আহমেদ রুবেল।
তিনি জানান, বাপন দাসকে ৩টি ধারায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সবগুলো ধারার সাজা চলবে একই সঙ্গে। ৩৪ ধারায় ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা আরও অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড, ২৮/১ ধারায় ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৩১/১ ধারায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের সাজা দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর বিকেলে ভোলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার বাসিন্দা বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামের এক তরুণের নিজের ছবিসংবলিত ফেসবুক আইডি থেকে আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)–কে কটূক্তি করে কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। এতে এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ওইদিন সন্ধ্যায় ফেসবুক আইডির মালিক বিপ্লব বৈদ্য বোরহানউদ্দিন থানায় তার আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন। এ সময় পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব বৈদ্যকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পটুয়াখালীর মো. ইমন (১৮) ও কামরুল ইসলাম শরিফ (১৮) নামে দুই তরুণকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।
কটূক্তির দুই দিন পরে ২৭ অক্টোবর স্থানীয়রা বিক্ষোভে নামলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়।
এরপর ফেসবুকে এ কটূক্তির ঘটনায় বিপ্লব বৈদ্য, মো. ইমন ও কামরুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। বোরহানউদ্দীন থানার তৎকালীন এসআই দেলায়ার হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি তদন্তভার বর্তায় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। সর্বশেষ তদন্তভার ন্যস্ত হয় পিবিআই বরিশালের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের ওপর।
তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জব্দকৃত মুঠোফোন ও অন্যান্য ডিভাইসের ফরেনসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেরিয়ে আসে মামলায় গ্রেপ্তার বিপ্লব বৈদ্য, ইমন ও কামরুল ইসলাম শরিফ ধর্মীয় উস্কানির সঙ্গে জড়িত নন।
মূলত কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চাচুয়া গ্রামের বিকাশ দাসের ছেলে বাপন দাস বিপ্লব বৈদ্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আল্লাহ ও মহানবি সম্পর্কে অপ্রচার চালায়। পিবিআই বাপন দাসকে গ্রেপ্তর করে। জিজ্ঞাসাবাদে বাপন দাস স্বীকার করে। তিনি আাদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা হয়, আইডি হ্যাক করে বিপ্লব বৈদ্যের কাছে অর্থ দাবি করে বাপন। বিপ্লব টাকা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে হ্যাক করা আইডি দিয়ে ধর্মীয় উস্কানি দেয় বাপন দাস। ফলে মামলার শুরুতে গ্রেফতার হওয়া তিন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে বাপন দাসকে একমাত্র আসামি করে ২০২০ সালের ১ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেই মামলায় আজ রায় দিল আদালত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৫
আপনার মতামত জানানঃ