রংপুরের পীরগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ মার্চ) সকালে ওই এসআইয়ের ভাড়া বাড়ি থেকে আরও একজনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে বুধবার রাতে রাতে উপজেলার কলেজপাড়া সংলগ্ন এসআইয়ের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় (৩০) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এসআই স্বপন রায়ের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায়। ২০ দিন আগে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ডেলিভারির জন্য গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এই সুযোগে পীরগাছার কলেজ রোডে স্বর্ণব্যবসায়ী রিপন রায়ের ভাড়া বাড়িতে স্বপন রায় বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের হুমকি দিয়ে আনতেন এবং তাদের ধর্ষণ করতেন।
বুধবার রাতে উপজেলার শুখানপুকুর এলাকার এক ভ্যানচালককে (৫০) হুমকি দিয়ে ওই বাড়িতে নিয়ে যান এসআই স্বপন রায় এবং তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে পায়ুপথ দিয়ে তার প্রচুর রক্তপাত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভ্যানচালককে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে বিষয়টি থামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা ঢোপে টেকেনি।
বুধবার রাতে উপজেলার শুখানপুকুর এলাকার এক ভ্যানচালককে (৫০) হুমকি দিয়ে ওই বাড়িতে নিয়ে যান এসআই স্বপন রায় এবং তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে পায়ুপথ দিয়ে তার প্রচুর রক্তপাত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
এদিকে এ ঘটনার পর শুক্রবার বেলা ১১টায় এসআই স্বপন রায়ের ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান বাসার তালা ভেঙ্গে ভুপতি চন্দ্র রায় (৪৮) নামের আরো একজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ভ্যানচালকর স্ত্রী জানান, ‘আমার সহজ-সরল স্বামীকে ভাড়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার সর্বনাশ করেছে পুলিশ স্বপন চন্দ্র। আমার স্বামী তার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই সে ছাড় দেয় নাই। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
ওই ভ্যানচালকের ছেলে জানান, ‘পুলিশ আমার বৃদ্ধ বাবার ওপর যেভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে তা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। পুলিশ বলে সে যেন কোনোভাবেই পার না পায়। তাকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’
শুক্রবার দুপুরে ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র। তিনি বলেন, পীরগাছা সদর ইউনিয়নের শুকানপুকুর গ্রামের দুই ব্যক্তি মৌখিকভাবে উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমারের বিরুদ্ধে তাদের ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে একজন ভ্যানচালক। তার বয়স ৫০। তাকে অসুস্থ অবস্থায় ভ্যানে করে রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। অন্যজন নৈশপ্রহরী। তার বয়স (৫৫)।
এদের দুজনের মধ্যে ভ্যানচালক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার কোনো এক সময় ধর্ষণের শিকার হন। আর অন্যজন নৈশপ্রহরী। গত সাত দিন আগে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হন।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর নির্দেশে অভিযুক্ত উপপরিদর্শককে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪১
আপনার মতামত জানানঃ