সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিলুপ্ত এই প্রাণীটিকে নিয়ে এখনো চলছে গবেষণা। ডাইনোসর সংক্রান্ত বই কিংবা সিনেমা, সবই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশালাকার এই প্রাণীটি কেন বিলুপ্ত হলো তা নিয়েও বিভিন্ন সময় নানা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু প্রাচীনকালের বিশালকার এই প্রাণীও ঠিক আজকের মানুষের মতো শ্বাসকষ্ট-কাশি-হাঁচি-ডায়রিয়া-জ্বরে ভুগত। চমকপ্রদ এই তথ্যই সম্প্রতি জানতে পেরেছেন গবেষকরা। খবর রয়টার্স
বর্তমানের দক্ষিণ-পশ্চিম মন্টানায় জুরাসিক যুগের একটি লম্বা গলার ডাইনোসরের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ১৫০ মিলিয়ন বছর আগের প্রাণীটি ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে খুবই অসুস্থ ছিল। প্রাণীটি শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁচি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছিল।
গবেষকরা ওই ডাইনোসরের নাম দিয়েছেন ডলি। বেচারা ডলিই প্রথম কোনো ডাইনোসর, যার শরীরে অসুস্থতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতিবার জানান, ডাইনোসরটি অ্যাসপারগিলোসিসের মতো একটি ছত্রাকের সংক্রমণে ভুগছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা একটা সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা। আধুনিক পাখি এবং সরীসৃপও এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগ কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে হাড়েও সংক্রমণ ঘটায়। এই রোগের কারণেই ডলির মৃত্যু হয় বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ডাইনোসররা অন্যান্য প্রাণীর মতোই রোগে ভুগত। তবে এ সংক্রান্ত প্রমাণ খুব একটা পাওয়া যায়নি।
মন্টানার মাল্টার গ্রেট প্লেইন ডাইনোসর মিউজিয়ামের জীবাশ্মবিদ্যার পরিচালক এবং এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ক্যারি উডরাফ বলেন, ডলি ছিল প্রায় ৬০ফুট লম্বা। তার ওজন ছিল পাঁচ থেকে ছয় টনের মধ্যে। ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সে রোগে ভুগে মারা যায় ডলি।
পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। তবে অতিকায় প্রাণীটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ