একাধারে মরুভূমি এবং আগুনের মত উত্তাপ সর্বদা বিরাজ করতে দেখা যায় সৌদি আরবে। সেখানে সর্বদাই এমন আবহাওয়ার সঙ্গেই মানিয়ে নিয়েছে মানুষজন। কিন্তু এবছর এতোটাই ঠান্ডা পড়েছে, যে কারণে এই মরুস্থানেও বরফ পড়তে দেখা গেল।
সৌদির এই নতুন রূপ স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে এসব ছবি।
এই মাসের শুরুর দিকে, মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর গভর্নরেটের ছবি ধারণ করেছিলেন সৌদি ফটোগ্রাফার ওসামা আল-হারবি। স্থানীয়রা এই অস্বাভাবিক দৃশ্য উপভোগ করতে জড়ো হয় মরুভূমিতে।
আল-হারবি সিএনএনকে বলেন, বদর মরুভূমিতে এত তীব্র শীত একটি বিরল ঘটনা। এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক শিলাবৃষ্টি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
সম্প্রতি সময়ে স্যোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ব্যাপকহারে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবুকে বেশ ভালোই তুষারপাত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চারিদিকে, যতদূর চোখ যাচ্ছে, ততদূরই শুরু বরফ আর বরফ। ঢেকে গিয়েছে পুরো বরফের চাদরে।
মরুস্থানে এই তুষারপাত দেখে আনন্দে উল্লাসে আত্মহারা সেখানকার মানুষজন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানকার মানুষজন আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেখানে নাচগানও করছেন। তাবুকে এমন অপরূপ দৃশ্য খুব কম মানুষই দেখেছেন।
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবুকে বেশ ভালোই তুষারপাত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চারিদিকে, যতদূর চোখ যাচ্ছে, ততদূরই শুরু বরফ আর বরফ। ঢেকে গিয়েছে পুরো বরফের চাদরে।
হাজার হাজার পর্যটক তাবুকের কাছে অবস্থিত আল-লজ পাহাড়ে এই তুষারপাত উপভোগ করতে একত্রিত হয়েছেন। গতবছর ফেব্রুয়ারিতেও এখানে তুষারপাত হলেও, এবারের তুষারপাত গত ৫০ বছরের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ বরফের চাদরে ঢাকা ছবিও পোস্ট করেছে। সেখানে দেখা যায় জাবাল আল-লাজ, জাবাল আল-তাহির এবং জাবাল আলকান পর্বতগুলি সম্পূর্ণ বরফের চাদরে ঢাকা রয়েছে।
জানা গিয়েছে, জাবাল আল-লজ ২৬০০ মিটার উঁচুতে রয়েছে, সেই কারণে এটিকে আলমন্ড মাউন্টেনও বলা হয়। প্রচুর পরিমাণে বাদাম গাছ লাগানো হয়েছে এখানে। জর্ডান সংলগ্ন এলাকা হল তাবুক। সেই কারণে বরফ গলে যাওয়ার পর সেখানকার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
সৌদি প্রেস এজেন্সি অনুসারে, মদিনা অঞ্চলে সম্প্রতি বাতাস, ঘন তুষারপাত এবং শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয় সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি।
চলতি সপ্তাহেও সৌদির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আবারও ভারী তুষারপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে যেভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যথেচ্ছাচার করেছে, তাতে প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ, প্রকৃতি একটি জীবন্ত সত্তা, তাকে শুধু সম্পদ লাভের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ এ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে উন্নত দেশগুলো নিজেদের তথাকথিত উন্নয়নের স্বার্থে জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেড প্রভৃতি তৈরি করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টোপ দিয়ে যাচ্ছে।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি যেমন পরিবেশগত, তেমনি একই সঙ্গে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকও বটে। উন্নত দেশগুলোর কারণেই এই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে তাদের কার্বন উদ্গিরণ হ্রাসে বাধ্য করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, কার্যকর কূটনীতি ও রাজনীতি।
তারা বলেন, জলবায়ু সম্মেলনগুলোর মূল সুরে সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যাপার থাকে না। কারণ, এর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কিন্তু এমন একটা ভাব করা হয় যে সমস্যাটি আমলে নেওয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, দুনিয়ার উন্নয়নের মডেল যেন প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন থামানো বা এর গতিকে ধীর করে দেওয়ার জন্য অনেক কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কথাবার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসছে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ–২৬)। এই সম্মেলনেও আগের ধারাবাহিকতা চালু থাকবে। আলাদাভাবে প্রতিটি দেশ এমন একটা পথ বের করার ওপর জোর দেবে, যাতে করে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিশ্রুতি তারা দিতে পারে।
তারা বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মে পৃথিবীর বিষুবরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মের তীব্রতা থাকায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। তবে এখন বিশ্ব জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে হিমবাহ গলে যাচ্ছে, কম তুষারপাত ও গরমকালে অতিরিক্ত গরম ও অতিবৃষ্টির ঘটনা ঘটছে। এখন ভাবার সময় এসেছে, পৃথিবীকে বাঁচাতে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষকে সজাগ হওয়ার। নইলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার সীমারেখা মানছে না, সে হোক উত্তর বা দক্ষিণ গোলার্ধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ