একসময় বলা হতো শয়তানের সুঁই। দুষ্ট, অবাধ্য শিশুদের মুখ সেলাই করে দেবে বলে এই ভয় দেখানো হত। এই শয়তানের সুঁই-ই হলো আজকের ফড়িং। গ্রামের অনেকের শৈশবের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কাটে ছোট ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে।
আমাদের পরিচিত ফড়িং নামের ছোট পতঙ্গটির রয়েছে অতি প্রাচীন ইতিহাস। পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের পদচারণার অনেক আগে থেকেই আকাশে উড়ে বেড়িয়েছে ফড়িংরা। প্রায় ৩০০ মিলিয়নের বেশি বছর ধরে পৃথিবীতে ফড়িংদের বসবাস।
সময়ের সাথে পরিবেশের পরিবর্তনে, বিবর্তনের ধারায় একসময়ের সুবিশাল পতঙ্গ ফড়িং আজকে পরিণত হয়েছে ছোট পতঙ্গে। কার্বনিফেরাস যুগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, ফড়িংদের পূর্বপুরুষেরা ছিল পতঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতঙ্গ। আকারে প্রায় একটা ঈগলের মতো।
ওই যুগে পাওয়া যেত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গগুলো। সুপ্রাচীন গ্রিফেনফ্লাই হলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গ, যাদের বিবেচনা করা হয় ফড়িংয়ের পূর্বপুরুষ হিসেবে।
গ্রিফেনফ্লাইগুলোর পাখার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব ছিল ৭১ সেন্টিমিটার অর্থাৎ উইং স্প্যান ছিলো ২৮ ইঞ্চি। শুধু পাখার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৩ সেন্টিমিটার বা ১৩ ইঞ্চি। কল্পনা করুন, একটি ড্রাগনফ্লাই বা ফড়িং আপনার ২৮ ইঞ্চির টেলিভিশন পর্দা যদি একেবারে ঢেকে দেয়, কেমন হবে?
সান্টা ক্রুজে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ম্যাথু গ্রাহাম বলেন, এ পর্যন্ত যেসব বড় বড় পতঙ্গের ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, সেগুলো বিশালকায় ড্রাগনফ্লাই ও গ্রিফিনফ্লাইয়ের। তবে এদের শারীরিক গঠনে তফাত আছে।
গবেষকেরা বলছেন, ২৮ ইঞ্চি প্রশস্ত ডানার গ্রিফিনফ্লাই–ই এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে বিচরণকারী বৃহত্তম পতঙ্গ। এদের বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ মেগানিউরোপসিস। এই প্রাণীর সবচেয়ে বড় ফসিল মিলেছে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসে।
সেগুলো প্রায় ৩০ কোটি বছরের পুরোনো। তুলনা করলে দেখা যায়, এখনকার ড্রাগনফ্লাইয়ের ডানার বিস্তার মাত্র ৮ ইঞ্চির মতো।
কার্বনিফেরাস যুগে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল ৩০% এরও বেশি, ক্ষেত্র বিশেষে এই পরিমাণ প্রায় ৫০% পর্যন্তও ছিল। মনে করা হয়, বাতাসে অক্সিজেনের এই উপস্থিতি পতঙ্গগুলোর সুবিশাল আকারের অন্যতম কারণ ছিল।
কেন এত বড় বড় পোকা ক্রমে সংকুচিত হয়ে গেল? পারড্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ টম টারপিন বলেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা সম্ভবত অনেক বেশি ছিল। আর সেই বাতাসে শ্বাস নিয়ে বড় বড় পতঙ্গ বেঁচে ছিল। কিন্তু যখন অক্সিজেনের মাত্রা কমতে লাগল, তখন সেগুলোর পক্ষে কি আর টিকে থাকা সম্ভব?
পাখিদের উত্থানও পোকাগুলোর গুটিয়ে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে। ২০১২ সালের এক গবেষণা বলছে, জুরাসিক যুগের শেষ দিকে উড়তে সক্ষম প্রাণীদের মধ্যে পাখিদের দাপট বেড়ে গিয়েছিল। সেই তুলনায় পতঙ্গগুলোর সামর্থ্য ছিল কম।
এখনকার যুগের সবচেয়ে বড় ডানাওয়ালা পতঙ্গের আবাস দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এদের ডানার বিস্তার কখনো কখনো ১০ ইঞ্চির কাছাকাছি হয়ে থাকে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ কেটি প্রাডিক এ তথ্য দিয়েছেন। এশীয় অ্যাটলাস মথের ডানাগুলো প্রায় ৬২ বর্গইঞ্চিজুড়ে ছড়িয়ে থাকে, আর সেটা একটা ডিভিডির বাক্সের চেয়েও বড়।
এসডব্লিউ/এসএস/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ