অর্ধকোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি আর অর্থনৈতিক ক্ষতির দুই বছরের ধাক্কা পার করে আরেকটি নতুন বছরে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে মানুষকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের নতুন রূপ চোখ রাঙালেও দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, চলতি বছরেই শেষ হবে এই বিভীষিকা।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন অতি সংক্রামক। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। কিন্তু এর সংক্রমণ কতটুকু মারাত্মক তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। গবেষণা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি বেশ দুর্বল। এমনকি একে প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনও বলা হচ্ছে।
ওমিক্রন কতটা শক্তিশালী?
প্রাথমিকভাবে গবেষকরা দাবি করছেন, ওমিক্রনের কারণে মৃদু সংক্রমণ হয়। তবে অন্যান্য ধরনগুলোর তুলনায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম এটি।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রন নিয়ে চলমান গবেষণাগুলো এখনো প্রকাশিত হয়নি। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন এই ধরনে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুঝুঁকি আসলে কতোটা মারাত্মক।
ল্যাবে ইঁদুর ও হ্যামেস্টারের ফুসফুসে ওমিক্রনের প্রভাবের ওপর পর্যালোচনা করে ফলাফল পাওয়া যাবে।
হংকং ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ওমিক্রন নিয়ে করা গবেষণার খসড়া প্রকাশ করেছেন। যা এখনো আন্তর্জাতিক মহলে পর্যালোচনা করা হয়নি।
এই গবেষণায় বলা হয়, শ্বাসনালীতে করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় ওমিক্রন ৭০ গুণ বেশি রূপান্তর হয়। কিন্তু ফুসফুসে এই ধরনটি তেমন সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। করলেও খুব ধীরগতিতে।
গবেষকদের মতে, শুরুর দিকে ছড়িয়ে পরা করোনাভাইরাসের তুলনায় ওমিক্রন ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অনেক ধীরগতির। অন্তত ১০ গুণ ধীরগতি হবে। এতেই বুঝা যায় ওমিক্রনের সংক্রমণ মৃদু।
এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ডক্টর মাইকেল চ্যান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি শুরু পর থেকেই আমরা দেখেছি যে, ভাইরাসটি ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টি করার পরেই মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি হয়। সংক্রমণ ফুসফুসে না হয়ে শ্বাসনালীর উপরের অংশে হলে ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম, শ্বাসনালীর ওপরের অংশে সংক্রমণ হয়। ফুসফুসে এই ধরণ সংক্রমণ ঘটাতে অনেক সময় নেয়।
তবে প্রাপ্ত ফলাফল দেখে আমাদের নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে বিপদ যেকোনো ভাবেই আসতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফুসফুসে না হয়ে শ্বাসনালীর ওপরের অংশে ওমিক্রনের সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছে স্কটল্যান্ডের একদল গবেষক।
এতে বলা হয়, ফুসফুসে এক ধরনের প্রোটিন কোষ থাকে। যার নাম টিএমপিআরএসএস২। অতীতে এই প্রোটিনের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়েছে।
কিন্তু ওমিক্রন টিএমপিআরএসএস২’র ভেতরে প্রবেশ করে সংক্রমন সৃষ্টি করতে পারছে না। যার কারণে করোনার এই ধরনটি ফুসফুসে অন্যান্য ধরনের তুলনায় তেমন প্রভাব ফেলতে অক্ষম হচ্ছে।
যে তিন কারণে থামবে মহামারি
তিনটি কারণে মহামারির অবসানের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো- শুরু থেকে চলমান সংক্রমণে অসংখ্য আক্রান্তের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া, ২০২২ সালের শেষ নাগদ বিশ্বের অর্ধেক সংখ্যকের বেশি মানুষের টিকার আওতায় আসা এবং করোনার নতুন ধরন এলেও তার প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও টিকাদান প্রয়াসের ফলে এ বছরের মে মাসের মধ্যে মহামারী শেষ হয়ে যেতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন মহামারী বিশেষজ্ঞ ও রাশিয়ার প্রাক্তন প্রধান স্যানিটারি ডাক্তার গেনাডি ওনিশ্চেনকো।
বার্তা সংস্থা তাস-কে তিনি বলেন, ‘মে মাস পর্যন্ত অনেক দীর্ঘ সময়। এখন যা প্রয়োজন আমরা যদি তা করি, তাহলে ততদিনে ভাইরাসটি অন্তত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ইতোমধ্যেই এটির সংক্রমন হ্রাস পাচ্ছে।’
এই বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। তাই এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে আতঙ্কিত হওয়ার বা কাজবিহীন দিন চালু করার আর কোনো কারণ নেই। টিকা দেওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করা প্রয়োজন সবাইকে।’
এদিকে, আশার কথা ওমিক্রনের উৎস দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা শুক্রবার তাদের দেশে জারি হওয়া কারফিউ তুলে নিয়েছে। দেশটির সরকার বলেছে, ওমিক্রন আর বড় ধরনের হুমকি নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানমও বলেছেন, সবাই সতর্ক হলে ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা গেলে ২০২২ সালই হবে মহামারির শেষ বছর।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫৫
আপনার মতামত জানানঃ