পর্তুগীজ খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে জুলিয়ানা দিয়াস দা কোস্টার। মোঘল রাজপরিবারের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এই নারী। খোদ দারাশিকোর প্রাসাদে থাকতেন জুলিয়ানা। পরে তার জন্যই তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটা বিলাসবহুল প্রাসাদ। কিন্তু কে এই জুলিয়ানা?
প্রহরডটইনের সূত্র মতে জানা যায়, জুলিয়ানার পরিচয় নিয়ে ঐতিহাসিকরা আজও একমত হতে পারেননি। অনেকের মতে, পর্তুগিজ উপনিবেশ হুগলি শহর আক্রমণ করে যে বন্দিদের নিয়ে গিয়েছিলেন সম্রাট শাজাহান, তাদের মধ্যেই কোনো একটি পরিবারে জন্ম জুলিয়ানার।
আবার কেউ বলেন, কোচিন বন্দর পর্তুগীজদের হাত থেকে ডাচরা দখল করে নিলে যে পরিবারগুলি সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল, জুলিয়ানার জন্ম সেখানে।
অবশ্য আধুনিক কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, জুলিয়ানা ছিলেন একজন পর্তুগিজ চিকিৎসকের স্ত্রী। অসুস্থ ঔরঙ্গজেবের চিকিৎসার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল সেই সাহেবকে। আর সেই সূত্রেই জুলিয়ানার সঙ্গে মোঘল দরবারের পরিচয়।
তবে প্রত্যেকেই একটি বিষয়ে একমত, জুলিয়ানা অত্যন্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি নিজেও ছিলেন একজন বিদূষী নারী। নানা বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য মুগ্ধ করেছিল সম্রাট ঔরঙ্গজেবকেও। আর তাই নিজের দুই পুত্রের শিক্ষার দায়িত্ব জুলিয়ানার কাঁধেই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই সুযোগটারই সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন জুলিয়ানা।
তিনি লক্ষ করেছিলেন, শাজাহান ও দারাশিকোকে বন্দি করে যেভাবে অত্যাচার করেছিলেন ঔরঙ্গজেব, তা মেনে নিতে পারেননি শাহজাদা মুয়াজ্জেম। এরপর মুয়াজ্জেমের মনের মধ্যে একটু একটু করে ঔরঙ্গজেব এবং ইসলাম সম্বন্ধে ঘৃণার বীজ বপন করতে থাকেন জুলিয়ানা।
শোনা যায় মুয়াজ্জেম নাকি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করতেও রাজি হয়ে যান। তবে এর মধ্যেই ঔরঙ্গজেব তার বড়ো ছেলেকেও বন্দি করে জেলখানায় পাঠান। মুয়াজ্জেমকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী করা আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার জন্য মুয়াজ্জেমের প্রতি আনুগত্য কমেনি জুলিয়ানার।
১৭০০ সাল থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত কারাবন্দি মুয়াজ্জেমকে খাবার-দাবার থেকে শুরু করে নানাকিছু গোপনে সরবরাহ করতে থাকেন তিনি। এমনকি রাজকর্মচারীদের মধ্যে শাহজাদার প্রতি সহানুভূতি জাগিয়ে তোলার কাজও করতে থাকেন। আর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মুয়াজ্জেমও তার কৃতজ্ঞতায় কার্পণ্য করেননি।
১৭০৭ সালে প্রথম বাহাদুর শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন মুয়াজ্জেম। আর তখন থেকেই মোঘল দরবারে জুলিয়ানার প্রতিটা কথাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথমে দারাশিকোর প্রাসাদটি জুলিয়ানার জন্য ছেড়ে দেন প্রথম বাহাদুর শাহ। এরপর জুলিয়ানার জন্য একাধিক বিলাসবহুল প্রাসাদও তৈরি করে দেওয়া হয়।
১৭১২ সালে প্রথম বাহাদুর শাহের মৃত্যু হয়। তবে জুলিয়ানার প্রতিপত্তিতে হাত দেননি পরবর্তী শাসকরাও। ঠিক কতদিন তিনি বেঁচেছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যে মোঘল দরবারে তার নাম সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চারিত হত, তাতে সন্দেহ নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ