নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে র্যাব তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে৷ নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন করে জানান, ‘‘৬ কোটি টাকা নিয়ে র্যাবই নজরুলসহ ৭ জনকে খুন করেছে৷ র্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার তারেক ও দুই জন মেজর জাহাঙ্গীর ও মেজর রানা এর সঙ্গে জড়িত৷ নজরুলের প্রতিপক্ষ নূর হোসেন ও হাসুর কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে৷”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘সাতজনকে আদমজী র্যাব ১১-এর ভিতরে নিয়ে মারা হয়েছে৷ যে গাড়িতে করে নিয়ে মারা হয়েছে সেই গাড়িও পাওয়া গেছে৷ গাড়ির ভেতরে রক্ত ছিল এবং এডভোকেট চন্দনের মোবাইল পাওয়া গেছে৷ র্যাবের এই কর্মকর্তাদের ধরলে সব তথ্য পাওয়া যাবে৷”
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ শুরুর দিকের র্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷ জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে র্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহবান
বাংলাদেশে গুমের শিকার হওয়া মানুষদের হদিস স্বজনদের জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ এই বিষয়ে একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
আজ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ‘জোরপূর্বক গুমের’ ঘটনা নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান ছাড়াও এই বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকাও দাবি করা হয়েছে৷
এইচআরডব্লিউ বলেছে, তারা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গুমের ৮৬টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকারের উচিত হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের হদিস তাদের স্বজনদের জানানো৷
সংগঠনের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের হদিস তাদের পরিবারদের জানাতে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপন করা উচিত৷’’
এসব ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এবং পুনরাবৃত্তি বন্ধে জাতিসংঘের কর্মকর্তা, দাতা সংস্থা ও ব্যবসায়িক অংশীদারদেরও পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি৷
বাংলাদেশের অবস্থান
তবে বাংলাদেশের সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরারবরই গুমের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে৷
এই বিষয়ে ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের মিথ্যাচার কেউ বিশ্বাস করে না৷ দাতারা ও জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এখন সেটিই প্রশ্ন৷’’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্য যে-কোনো বাহিনীর চেয়ে গুমের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাবের) দায় সবচেয়ে বেশি৷
এইচআরডব্লিউর মতে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসের উচিত অনতিবিলম্বে র্যাব কর্মকর্তাদের শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা৷
এই বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এ ধরনের বিবৃতির বিষয়ে সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৭০৭
আপনার মতামত জানানঃ