কাবুলের মসনদে বসার পর থেকেই দেশটির শিক্ষাব্যবস্থার উপর একের পর এক খড়গ নেমে আসছে তালিবানের। এবার মাদ্রাসা শিক্ষার উপর গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রিকে মূল্যহীন ঘোষণা করল তালিবান।
২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া স্নাতক ডিগ্রি কোনো কাজে আসবে না। দেশটির বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তালিবানের পক্ষ থেকে এমনটি বলা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারারদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, গত ২০ বছরে বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নেওয়া স্নাতক ডিগ্রি কোনো কাজে আসবে না।
হাক্কানি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই এমন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, যারা শিক্ষার্থীদের এবং আগত প্রজন্মকে দেশে এবং আফগানিস্তানে যে মূল্যবোধ রয়েছে তা শেখাতে পারে।
মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন এবং ধর্মীয় পড়াশোনা করেছেন তাদের চেয়ে কম মূল্যবান আধুনিক গবেষণার মাস্টার্স ও পিএইচডিধারীরা।
এর আগে আফগান তালিবানের শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলভি নুরুল্লাহ মুনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তালিবানের সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনিরকে বলতে শোনা যায়, ‘এখনকার দিনে পিএইচডি ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখুন, ক্ষমতায় থাকা মোল্লা ও তালিবান কারওই পিএইচডি, এমএ, এমনকি হাইস্কুল ডিগ্রিও নেই। কিন্তু তারা সবার সেরা।’
এরপর আফগানিস্তানের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে খুললেও, মাধ্যমিক স্তরের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় তালিবান সরকার। তালিবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা জানায়, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে নারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তালিবান সরকারের এই আদেশে বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এবারের তালিবান শাসনামল ১৯৯৬-২০০১ সালের সময়ের মতো হবে না। ওই সময় নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, মেয়েদেরকে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিলেও ক্লাসে ছেলে-মেয়েদের আলাদা বসার আদেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে স্পষ্টভাবেই তালিবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও তা থেকে সরে আসছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না গোষ্ঠীটি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ