ধর্ষণ এমন এক ব্যাধি যা থেকে সমাজকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি এত আধুনিক হবার পরেও। ধর্ষকের হাত থেকে শিশু কিংবা বৃদ্ধা কেউই রক্ষা পায়নি। এর পেছনে সামাজিক অবক্ষয় এবং বিচারহীনতা বেশি পরিমানে দায়ী।
আজ শনিবার (১৪ আগস্ট) সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন হাজং জাতিগোষ্ঠীর সদ্য বিবাহিত এক তরুণী। এ ঘটনায় বিকালে অভিযুক্ত ধর্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃত ধর্ষক উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আব্দুর রাশিদ (৪০)। অপরদিকে ভিকটিম আদিবাসী নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও ভিকটিম সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে ওই ধর্ষণের শিকার তরুণী বাবার বাড়ি বেড়াতে আসে। শনিবার সকালে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রাজাই গ্রামের এক আদিবাসী নারী সকালে রাজাই চড়াতে গোসল করতে যান। এসময় একই গ্রামের আবু কালামের ছেলে আব্দুর রাশিদ মিয়াও গোসল করতে যান। গোসল করার একপর্য়ায়ে আদিবাসী নারীকে রাশিদ মিয়া কু প্রস্তাব দেয়। এতে আদিবাসী নারী রাজি না হওয়ায় তাকে জোরপূর্বক ধরে চড়ার পাশের ঝুঁপে নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এসময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় আদিবাসী নারী চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পায়নি। পরে ধর্ষিত আদিবাসী নারী বাড়ী ফিরে এসে বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা বিষয়টি স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানাকে জানায়।
রাজাইগ্রামের আদিবাসী নেতা অ্যান্ড্রু সলোমার বলেন, সকালে নদীতে গোসল করতে গিয়ে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় আমাদের কমিউনিটির সবাই ক্ষুব্ধ। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতিতা তরুণীর পরিবার খুবই হতদরিদ্র। আইনি সহায়তা চাইবে এমন সামর্থও তাদের নেই।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লিটন খন্দকার বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবুল কালামের ছেলে ও দুই সন্তানের জনক রাশেদকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনি কার্যক্রম শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এ বছরেরই ৮ মে সুনামগঞ্জের ছাতকে এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠে। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভুক্তভোগীর মা পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে একই গ্রামের এক যুবক ঘরে ঢুকে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে আটক করে। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্তের ভাইসহ স্বজনরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এসময় হামলাকারীরা ওই মেয়ের বাবা এবং তার ভাইকে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। রাতেই আহতদেরকে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ওই ঘটনায় সোমবার (১০ মে) পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ মে) থানার উপ-পরিদর্শক আতিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ধর্ষনের পরিসংখ্যান শেষবার করা হয় গতবছর ২০২০ সালে। গতবছরে ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং ৮১৫টি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি। পুলিশের হিসাব বলছে, গত বছর ধর্ষণের কারণে ১২ শিশু এবং ২৬ জন নারী মারা যান। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১ নারী ও ১৪ শিশু।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২১২০
আপনার মতামত জানানঃ