আফগানিস্তানে প্রায় দুই দশক পর আবার ক্ষমতা দখল করার পথে এগোচ্ছে তালিবান। দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর একের পর এক এলাকা দখল করছে তালিবান বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটির ৩৪টির মধ্যে ১৮টি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটেছে তালিবানের হাতে। এর মধ্যেই তালিবানের দখল করা এলাকাগুলোয় নারীদের অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করার ‘ভয়াবহ’ তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। আফগানিস্তানে বহু কষ্টে অর্জন করা নারী ও কিশোরীদের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়ার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস। তার ভাষ্য মতে, এই খবর ভয়াবহ এবং মন ভেঙে দেওয়ার মতো।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘তালিবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা খবরে আমি গভীরভাবে শঙ্কিত। বিশেষ করে নারী ও সাংবাদিকদের অধিকার লঙ্ঘন করছে তালিবান।’
এদিকে, নিজেদের যোদ্ধাদের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিতে মেয়ে শিশুদের খোঁজ করছে আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী তালিবান। গোষ্ঠীটির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, নিজেদের দখলকৃত এলাকার স্থানীয় নেতাদের ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে তালিবান।
এই পদক্ষেপকে আফগানিস্তানে শরিয়া আইন ফিরে আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেকেই। শরিয়া আইন অনুযায়ী পুরুষ সঙ্গী ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে পারে না নারীরা। বাধ্যতামূলক তাদের হিজাব পরতে হয়। এছাড়া নিজেদের দখলকৃত এলাকায় বহু স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে তালিবান। কেবল নারী শিক্ষক হলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তালিবানের তরফে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কেউ আইন অমান্য করলে তার সঙ্গে কঠোর আচরণ করা হবে।
পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালিবানের অগ্রযাত্রার মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে হাজারো মানুষের পলায়ন এবং অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ‘মানবিক বিপর্যয়’ ঘনিয়ে আসার সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র সাবিয়া মান্তু এক হিসাব দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানে গত মে মাস থেকে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু।
বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। একে যুদ্ধাপরাধ বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। একই সাথে জাতিসংঘের কোনো কর্মীকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ আফগান পরিস্থিতির ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায়’ মূল্যায়ন করছে। রাজধানী কাবুলে সংস্থাটির কিছু কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সরকারি বাহিনী ও তালিবান যোদ্ধাদের লড়াইয়ে শুধু গত মাসেই এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে।
প্রাণ বাঁচাতে সংঘাতপূর্ণ এলাকা ও শহরগুলো থেকে হাজারো সাধারণ মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের আশায় রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছে। বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষের জন্য আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ হাজারের মতো শিশু। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, সংঘাতের কারণে আফগানিস্তানে চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে অচিরেই মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭১৮
আপনার মতামত জানানঃ