দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মডার্নার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এই অনুমোদন দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মডার্নার টিকা অনুমোদন দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জুন টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মডার্না টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর। সংরক্ষণের জন্য মডার্নার টিকা অনেকটা স্বস্তিদায়ক। মডার্নার টিকা সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাড়ির ফ্রিজেও এই টিকা রাখা যাবে। ৩০ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে এই টিকা স্থানান্তর করা সহজ।
সর্বশেষ গত ১৫ জুন দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জনসনের টিকা ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। জনসন টিকার সুবিধা হলো এটি সিঙ্গেল ডোজ। অর্থাৎ এই টিকার এক ডোজই যথেষ্ট। আরা দেশে অনুমোদিত বাকি টিকাগুলো দুই ডোজের। এর আগে ৩ জুন চীনের সিনোভ্যাক টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য দেশে অনুমোদন পায়।
তারও আগে গত ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন করে। এই টিকা ১২ বছরের উপরের বয়সীদের ব্যবহারের উপযোগী এটি সংরক্ষণ করতে হিমাঙ্কের নিচে ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। তবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৫ দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব।
দেশের করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জরুরি ব্যবহারের জন্য প্রথমেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকা টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে জরুরি ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার উৎপাদিত টিকা ‘স্পুটনিক’-এর অনুমোদন দেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তারপরেই অনুমোদন দেয় চীনের সিনোফার্মের টিকা।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়,
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের জন্য মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ টিকা চলতি সপ্তাহে পাঠানো শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের টিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কবে টিকার চালান পাঠানো হবে, সে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলেননি মার্কিন কর্মকর্তারা।
গত শনিবার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আর্ল মিলার ওই দিন তার টুইটে লেখেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশ খুব শিগগির গাভির (করোনার টিকার বৈশ্বিক জোট) মাধ্যমে মার্কিন জনগণের কাছ থেকে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উপহার পাবে।’
প্রসঙ্গত, কোভ্যাক্স মাধ্যমে এবং সরাসরি বিভিন্ন দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ হওয়া তিন কোটি টিকার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। ২২ জুন হোয়াইট হাউস করোনার টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের পাশাপাশি এশিয়ার ১৮টি দেশকে নতুন করে ১ কোটি ৬০ লাখ টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বিশ্বের ৩০টি দেশ ও জোটকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যে ১ কোটি ৪০ লাখ টিকা দেবে, সেই তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩২০
আপনার মতামত জানানঃ