২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশে প্রথম মানব শরীরে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এরপর গত দেড় বছর ধরে পৃথিবী রাজত্ব করে চলেছে এই মহামারী।
এদিকে, মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এবং দ্য ওয়ার সায়েন্স নামের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অনলাইন জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নতুন গবেষণায় করোনাভাইরাস নিয়ে এক বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে। এই গবেষণায় জানা গেছে, ২০ হাজার বছর আগেও একবার পৃথিবীতে তাণ্ডব চালিয়েছিল মহামারি করোনাভাইরাস।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসিন সুইলিমি এবং রে টোবলার এই গবেষণা পরিচালনা করেন। এই গবেষকেরা দাবি করেছেন, সেই সময় পূর্ব এশিয়ায় করোনা মহামারির ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। আর আধুনিক চীন, জাপান এবং ভিয়েতনামের মানুষের ডিএনএতে এখনও সেই করোনা প্রজাতির ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে।
এই দুই গবেষক দাবি করেছেন, পূর্ব এশিয়ায় বর্তমানে যে মানুষ বসবাস করেন, তাদের ৪২টি জিনে করোনাভাইরাস প্রজাতির জিনগত পরিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে। বিশ্বের ২৬টি জাতির ২ হাজার ৫০০ জিন নিয়ে বিশেষ ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন এই দুই গবেষক।
তারা বলেন, এই ভাইরাস ইন্টারেকটিং প্রোটিনসের (ভিআইপি) সংকেত পাওয়া গেছে মানুষের মাত্র পাঁচটি জাতির ক্ষেত্রে। তারা সবাই পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দা। যা সম্ভবত করোনাভাইরাস প্রজাতির বিচরণের ক্ষেত্র ছিল।
সেই তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক যুগের পূর্ব এশিয়ার মানুষ প্রায় ২০ হাজার বছর আগেই করোনাভাইরাসের দাপটের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
গবেষকদের দাবি, ৪২টি ভিআইপি মূলত ফুসফুসে প্রভাব ফেলত। এগুলো করোনার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, তারা দাবি করেছেন, ওই ভিআইপিগুলোর সঙ্গে যে সরাসরি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের যোগ ছিল। আর এর প্রভাবেই বর্তমান মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশাপাশি দুই গবেষক দাবি করেছেন, কয়েকটি ভিআইপির জিন বর্তমানে করোনার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
সেই গবেষকদের একজন ইয়াসিন সুইলমি বলেছেন, এইসব জিনোমে হাজার হাজার বছরের মানব বিবর্তনের তথ্য ধরা থাকে। সেই তথ্য থেকেই তারা একেবারে প্রথম করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে পেরেছেন।
তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা একসময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং এর অভিযোজন ঘটেছিল, তার সুদৃঢ় প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
এই গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পূর্ব এশিয়া থেকে যে একাধিক করোনা ভাইরাস মহামারির উৎপত্তি হয়েছিল, তার সপক্ষে একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে প্রাচীনকালের ভাইরাসের বিষয়ে ভালোভাবে জানা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে মহামারির পূর্বাভাস দেয়া সহজ হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ