ফোনে আড়িপাতা বন্ধে ৭ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ জানতে চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেনর ১০ আইনজীবী। মঙ্গলবার (২২ জুন) ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ নোটিশ পাঠান।
আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বণিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, মুস্তাফিজুর রহমান, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬টি আড়িপাতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ উল্লেখযোগ্য। এসব আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচার হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ফোনালাপে আড়িপাতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, সার্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। এরই ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই অধিকার সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অর্থাৎ, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট, ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ধারা ৬ অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারা ৩০ (চ) অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা এই কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, এই ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা বলেন, আড়ি পেতে টেলিফোন ও ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চর্চা সারা বিশ্বেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো করে থাকে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের কারণ দেখিয়ে চর্চাটির প্রসার ঘটেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে এই হাতিয়ারের অপব্যবহার রোধে গণতান্ত্রিক জবাবদিহির বিশেষ ব্যবস্থা আছে। আদালতের অনুমোদন এর অপব্যবহার রোধের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে থাকে। কিন্তু যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু রয়েছে, সেসব দেশে ভিন্নমত দমনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই কৌশলের নির্বিচার প্রয়োগ হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৭০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ