ভারতে করোনা, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মধ্যে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে গ্রিন ফাঙ্গাস আতঙ্ক। মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর তার শরীরে নতুন করে এই ছত্রাকের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। শারিরীক অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ৩৪ বছর বয়সী ওই যুবক সম্প্রতি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে প্রায় দুই মাস পর বাড়ি ফিরে গেছেন। কিন্তু ১০-১৫ দিনের মধ্যে তার শরীরে জ্বর আসে। প্রথমে ধারণা করা হয় তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে আবারো হাসপাতালে পরীক্ষা করলে জানা যায় তিনি গ্রিন ফাঙ্গাসে আক্রান্ত।
ইন্দোরের শ্রী অরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এসএআইএমএস) বক্ষব্যাধি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রবি দোশি বলেন, এটা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের নতুন একটি ঘটনা। এই ছত্রাকের বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রিন ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হলে রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রবি দোশি জানান, ‘দুই মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই রোগী। তবে তার নাক থেকে রক্ত ঝরা, জ্বরের মতো উপসর্গ রয়ে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে পরীক্ষার পরে দেখা যায়, ওই রোগী ব্ল্যাক নয়, বরং গ্রিন ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এটা তার ফুসফুস, নসিকা গ্রন্থি ও রক্তে ছড়িয়েছে।’
এর আগে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীদের ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর মিলেছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হলো মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এটি রোগীদের মুখ, নাক, চোখে, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। এতে আক্রান্ত হলে মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই ফাঙ্গাস।
গত তিন সপ্তাহে ১৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে এই সংক্রমণের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এই রোগ করোনা থেকেও ৫০ শতাংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইআইএমএস) প্রধান ডা. রনদীপ গুলেরিয়া গত মাসে জানিয়েছেন, কোন এলাকায় ছড়িয়েছে ও রঙের বিবেচনায় অনেক সময় একই ফাঙ্গাসের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়। এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ রয়েছে। চিকিৎসা এগিয়ে নিতে এই বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এ সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এ ছত্রাক দেখা যায়। এআইআইএমএস জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
এআইআইএমএস আরও জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে ও নিয়মিত স্টরয়েড নেন, এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা, স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১২৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ