সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তার বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানরত অন্যান্য সাংবাদিককেও একটি ভীতিকর বার্তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একইসাথে রোজিনার গ্রেপ্তার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর চরম আঘাত বলেও জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি।
আজ বৃহস্পতিবার(২০ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা সকল দমনমূলক অভিযোগ তুলে নেয়ারও দাবি জানিয়েছে।
রোজিনা ইসলামের সহকর্মীদের বিশ্বাস, দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই তাকে হেনস্তা এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সরকারের গোপন নথি সংগ্রহের চেষ্টা ও সেগুলোর ছবি তোলার দায়ে রোজিনাকে দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের ৩ ও ৫ নং ধারা এবং পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। সারা দেশের সাংবাদিকরা এই মুহূর্তে রোজিনার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত হয় রোজিনা ইসলামের অপরাধ প্রমাণ করা অথবা তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং দেশের সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেয়া। আর যদি তা না হয়, তাহলে তা সরকারের সর্বোচ্চ একটি ত্রুটিকেই তুলে ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে রাখার পরিবর্তে মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কৌশলের অংশ হিসেবেই মুক্ত গণমাধ্যম চর্চা চালু রাখা উচিত।’
এদিকে রোজিনাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। তারা বলেছে, রোজিনাকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দিয়ে সরকার তার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করুক।
এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় আরএসএফ। বিবৃতিটি আরএসএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আরএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, রোজিনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার প্রতিবেদন করেছেন। গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দেওয়া হয়।
আরএসএফের এশিয়া-প্যাসিফিক ডেস্কের প্রধান ড্যানিয়েল বাস্টার্ড বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খুবই বিস্ময়কর। কারণ এগুলো স্পষ্টভাবেই খুব অপরিপক্কভাবে সাজানো। এতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বিপন্ন হচ্ছে।’
রোজিনার বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আমলের আইনে মামলার নিন্দা জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার দীর্ঘমেয়াদি সাজা হতে পারে।
জানা যায়, রোজিনা ইসলাম গত ১৭মে, ২০২১ তারিখে বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গে মিটিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে তাকে ছয় ঘন্টা একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং এই সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, তিনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রোজিনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১৮ মে তার শুনানির পর অন্য এক সাংবাদিকের করা ভিডিও রেকর্ডিংয়ে দেখা যায় রোজিনা বলছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে আমার করা রিপোর্টের জের ধরেই আমার সাথে এখন অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।’
রোজিনার করা সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে ঘুষ নেয়া, মহামারিকালে জরুরি চিকিৎসা সেবা সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম, এয়ারপোর্টে বিদেশ থেকে সাহায্য হিসেবে আসা জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী ১০ মাস ধরে আটকে রাখার মত বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
১৮ মে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেয় এবং এর পরিবর্তে রোজিনাকে কারাগারে পাঠায়। রোজিনার জামিনের শুনানির দিন ধার্য করা ছিল আজ (২০ মে)। আজকের আদালত রোজিনার জামিন বিষয়ে আদেশ আগামী রবিবার দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ