১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। এবিষয়ে ২৪ এপ্রিল থেকে তুরস্কের মধ্যস্ততায় শুরু হচ্ছে আফগানিস্তান ইস্যুতে ১১ দিনের বৈঠক।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলার জন্য তালেবানদের দায়ী করে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তানে শান্ত ফেরানোর যে প্রচেষ্টা গত কয়েক বছর ধরে নেয়া হচ্ছে তার প্রধান অন্তরায় দেশটি থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহার ইস্যু। গত বছর কাতারে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিরও অন্যতম শর্ত ছিল সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি।
সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা
নাইন ইলেভেন হামলার ২০তম বার্ষিকীর আগেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি জেন পিসাকি জানান, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দীর্ঘ সময় ধরেই মনে করেন, আফগানিস্তানের চলমান সংকট নিরসনে বলপ্রয়োগ কোন সমাধান নয়। বিবদমান দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতেই সংকট সমাধানের পক্ষে তিনি। আর একারণেই ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান চান তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১ মের মধ্যে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অনেক বিশেষজ্ঞ অবাক হয়েছেন, কারণ তারা আশা করেছিলেন বাইডেন ট্রাম্পের নীতি পালটে দেবেন৷
এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ ছিল। ব্যয়বহুল এ যুদ্ধ চালানো ও আফগানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির আর কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন অনেকে। যদিও অপর একটি পক্ষের মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে তালেবান আবার জেগে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
বারবার সময়সূচি নির্ধারণ করেও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় সব মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।
আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহায়তায় কাজ করা কয়েকশ’ সদস্যও দেশটিতে রয়েছে। তারা মূলত আফগান সরকারকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কার্যত কাজ করছেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি হয় তারপর থেকে আফগানিস্তানে সহিংস হামলা বেড়েছে৷ তালেবান অবশ্য এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে তালেবানের রাজি না হওয়ার বিষয়টি, তাদের ইচ্ছা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ জাগিয়েছে৷
কি বলছে তালেবানরা
তালেবান বলেছে, দেশ থেকে সব মার্কিন সেনা চলে না গেলে তারা ২৪ এপ্রিল থেকে তুরস্কে শুরু হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেনা৷ ‘‘তুরস্কে আফগান সম্মেলনের ফলাফল মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্ধারণ করবে,’’ বলে ডয়চে ভেলেকে জানান কাবুলের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শফিক হামদাম৷
তিনি মনে করেন, সম্মেলনে যদি তালেবান ও অন্যান্য আফগানদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন সম্ভব হয় তাহলে আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে সেনা চলে যাওয়ার ক্ষতিটা সামাল দেয়া যাবে৷ ‘‘কিন্তু যদি সম্মেলন সেটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা,’’ বলেন হামদাম৷
বিশেষজ্ঞদের মতামত
যুক্তরাষ্ট্র ময়দান ত্যাগ করলেও আফগান যুদ্ধ শেষ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক বিশ্লেষক। ঠিক যেমনটা হয়েছিল, গত শতকের আশির দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর।
মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে যত দিন আছে, এই সময়ের মধ্যে দেশটির সরকারের সঙ্গে তালেবানের কোনো ধরনের শান্তিচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হয়। অনেকে মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে তালেবান। তখন তারা আরও শক্তিশালী হবে। হয়ে উঠবে অপ্রতিরোধ্য। বিপরীতে আফগান সরকার হয়ে পড়বে অসহায়। তখনকার পরিস্থিতিতে তালেবানের কাছে আফগান সরকারের পতন হলে তা অস্বাভাবিক কিছু হবে না।
আফগানিস্তান ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন পন্থায় আফগান ইস্যুতে যুক্ত থাকতে চায়। এসব পন্থার মধ্যে রয়েছে কূটনীতি, অর্থনীতি, মানবিক সহায়তা প্রভৃতি। কিন্তু আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা না করে পরে এসব দিয়ে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনা কতটা সম্ভব হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে আফগান যুদ্ধ শেষ হবে না। এই পদক্ষেপ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। দেশটি আরও অস্থিতিশীল হতে পারে। এই অস্থিতিশীলতা আঞ্চলিক পর্যায়েও ছড়াতে পারে। আফগান জনগণের সামনে এখন তাদের গল্পের আরেকটি অধ্যায় শুরুর অপেক্ষা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ