যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে নতুন স্ট্রেইন কতটা ছড়িয়েছে তার বিস্তারিত জানতে কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানিয়েছেন, ‘আমরা জানুয়ারির প্রথম দিকে পাঁচ বা ছয় জনের নমুনায় যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের করোনাভাইরাস খুঁজে পেয়েছি।’
করোনাভাইরাস নিয়মিতভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে। রূপান্তরিত নতুন একটি ধরন বা স্ট্রেইন গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। নতুন এই ধরনটির সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তখন থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয় বা বাড়তি সতর্কতা নেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৩টি দেশে করোনার নতুন এই স্ট্রেইনের সংক্রমণ হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেইন আরও বেশি সংক্রামক।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে শনাক্তের হার বাড়ছে কি না, তা এখনই বলা কঠিন হবে। এর জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। ব্যয়বহুল হলেও ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে কি-না – তা জানতে সরকারের নিয়মিতভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা উচিত যোগ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মানুষ সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার বিষয়ে উদাসীন বলেই সংক্রমণের হার বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সব ধরনের স্ট্রেইনের জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একই। আমাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নিয়মিত হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে এবং ভিড় থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা যদি এই স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলি তাহলে ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারব।’
গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন স্ট্রেইন বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন এই স্ট্রেইন আগের স্ট্রেইনের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর করোনার নতুন ধরনটি অত্যন্ত দ্রুত যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞানীরা অন্য সব স্ট্রেইনের তুলনায় যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের এই নতুন স্ট্রেইন হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় এই স্ট্রেইনটি ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি তাড়াতাড়ি সংক্রমিত করছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবারই বাংলাদেশে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল নয় শতাধিক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৯ই মার্চের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯১২জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা আগের প্রায় দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের হার ১৩.২ শতাংশ। ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে সহস্রাধিক হাসপাতালে একযোগে করোনাভাইরাসের গণ-টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ