রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ধরলে ভয়ে বুক অনেকেরই কাঁপে। জরিমানা যে হারে বেড়েছে তাতে অনেকেই ভাবেন, এবার পকেটে কত টাকার ধাক্কা লাগল কে জানে। অবশ্যই রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ম মেনেই গাড়ি চালানো উচিত। না মানলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। কিন্তু সেই ট্রাফিক পুলিশই যদি ট্রাফিক আইন না মেনেই গাড়ি চালান তবে ঘটনাটা কেমন হয়? যাদের ভয়ে লোকজন গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা এনিয়ে থাকেন আতঙ্কে, তারাই যদি গাড়ির অবৈধ কাগজপত্র নিয়ে গাড়ি চালান তবে আইনের বারোটা বেজে যাওয়ার মতোই দশা। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেলো ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে মোটরযানের কাগজপত্র যাচাইয়ের দায়িত্ব যে কর্মকর্তার, তিনি নিজেই ব্যবহার করেন বৈধ কাগজপত্রহীন গাড়ী। তার এমন নিয়ম বহির্ভুত কাজ করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
বিআরটিএ সনদে তার ব্যবহৃত গাড়িটির মালিকানা রয়েছে ইছাহক আলী খান পান্না নামে। ইছাহক আলীর ঠিকানা রয়েছে ঢাকার সোবহানবাগ সরকারি আবাসিক এলাকায়। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-১৮২০। এই গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১১ সালের ২৫ জুলাই। ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে অনলাইনে এ তথ্য প্রদান করা হয়।
ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আপনি কী বলবেন আমি জানি। আপনি অফিসে আসেন, আমি আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মিশনে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ৪৬ লাখ টাকা পেয়েছি। তাই কয়েকলাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করতেই পারি।’
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের জন্য কোনো সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নেই। ইচ্ছে করলে যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিজ উদ্যোগে গাড়ি কিনে ব্যবহার করতে পারে। তবে আইন সবার জন্যই সমান। কেউ যদি বৈধ কাগজপত্রহীন গাড়ি ব্যবহার করে আর সেটি যদি আমাদের নলেজে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার অপরাধে মামলার সুযোগ আছে।’
বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আদালত থেকে নিলামের মাধ্যমে যে কেউ গাড়ি কিনতে পারে। সে সময় ওই গাড়িটির সড়কে চলাচলের মতো ফিটনেস নাও থাকতে পারে। সেই গাড়িটি পরবর্তীতে সড়কে চালাতে হলে অবশ্যই বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে। এই ফিটনেস সনদ পরবর্তীতে বিআরটিএর নিজস্ব অনলাইনে লিপিবদ্ধ থাকবে। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে আইন রক্ষাকারীরা আইন ভঙ্গ করলে এক বিশৃঙ্খল তৈরী হয়। আইনের রক্ষক হয়ে যদি তা লঙ্ঘন করেন তবে সেটা অন্যদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তারা বলেন, দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে এতো এতো অভিযোগ আসে যে, সন্ত্রাসীদের চেয়ে পুলিশ নিয়ে ভাববার সময় চলে এসেছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও পাচার ইত্যাদি হেন অপকর্ম নেই যা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। আইনের অপব্যবহার করে এসব করে থাকেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ট্রাফিক পুলিশের প্রধান হয়ে তিনিও ভেবেছিলেন কোথাও তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি ট্রাফিক পুলিশের প্রধান তাকেই যদি এমন অবৈধ পন্থায় যেতে হয় তবে পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৮
আপনার মতামত জানানঃ