অজান্তেই শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে মাংস। তারপর দু’দিনের মধ্যে সব শেষ! মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার উৎপাতে এখন শোরগোল জাপানে। করোনাকালের যে বিধিনিষেধ এতদিন ধরে জারি ছিল সম্প্রতি তার অবসান ঘটেছে সেখানে। ব্যস, তারপরই এই ভয়ঙ্কর রোগের উৎপাত। তটস্থ হয়ে পড়েছে জাপানবাসী।
‘মাংস খাওয়া’ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি বিরল এবং মারাত্মক রোগ জাপানে, বিশেষ করে টোকিওতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। স্ট্রেপ্টোকোকাল টক্সিক শক সিনড্রোম (STSS) হল এমন একটি রোগ যা সংক্রমণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারাত্মক হতে পারে।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে টোকিও একাই ১৪৫টি কেস রিপোর্ট করেছে। স্থানীয় সংবাদপত্র আসাহি শিম্বুনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৩০ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।
জাপানের জাতীয় সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউট রিপোর্ট করেছে, ২ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী STSS কেস ৯৭৭-এ পৌঁছেছে, যা গত বছরে ছিল ৯৪১। গ্রুপ এ-স্ট্রেপ্টোকক্কাস (GAS) প্রায়শই শিশুদের মধ্যে ‘স্ট্রেপ থ্রোট’ নামে পরিচিত একটি সাধারণ অবস্থা। যার জেরে গলা ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।
এই ব্যাকটেরিয়ামের কিছু স্ট্রেইন গুরুতর এবং দ্রুত অগ্রসরমান লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে যেমন অঙ্গে ব্যথা এবং ফোলাভাব, জ্বর এবং নিম্ন রক্তচাপ। এই লক্ষণগুলি নেক্রোসিস, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অঙ্গ ব্যর্থতা এবং এমনকি মৃত্যুর কারণও পারে। ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা এই গুরুতর ফলাফলগুলির জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
টোকিও উইমেনস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগের অধ্যাপক কেন কিকুচি ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘বেশিরভাগ মৃত্যু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে।’
একজন রোগী সকালে পায়ে ফোলাভাব লক্ষ্য করেন, দুপুরের মধ্যে এটি হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে এবং সেই রোগী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যেতে পারেন।
কমপক্ষে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ২০২২ সালে আক্রমণাত্মক গ্রুপ এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস (iGAS) রোগের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে STSS অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, কোভিড বিধিনিষেধের অবসানের পরে নতুন এই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। কিকুচি বলেছেন, সংক্রমণের বর্তমান হারে জাপানে শনাক্তের সংখ্যা এই বছর ২৫০০ ছুঁয়ে যেতে পারে, যা ভয়াবহ। মৃত্যুর হার পৌঁছে যেতে পারে ৩০ শতাংশে।
২০২২ সালে ইউরোপের অন্তত ৫টি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই রোগের ব্যাপারে জানিয়েছিল। ‘হু’-র ধারণা, কোভিড বিধি উঠিয়ে দেওয়ার ফলেই একাধিক রোগের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। সবথেকে আতঙ্কের বিষয়, ‘স্ট্রেপটোকোকাল টক্সিক শক সিন্ড্রোম’-এর মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ।
যদিও গবেষকদের একাংশের দাবি, এই রোগ বিরল। তবে দিনকাল যা আসছে তাতে বিরল রোগের সংখ্যাও বাড়তে পারে। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম, এছাড়া ডায়াবেটিস, ক্যানসার, রক্তজনিত রোগ রয়েছে তাঁদের বিশেষভাবে সাবধান থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ