শল্যচিকিৎসা ও জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিওলজিস্টের (অবেদনবিদ) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যানেসথেসিওলজিস্ট না থাকায় সার্বিকভাবে ভুগছে স্বাস্থ্যসেবা খাত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য চিকিৎসকদের তুলনায় কম বেতন, সার্জনদের চেয়ে কম পরিচিতি ও যথেষ্ট সরকারি চাকরির সুযোগ না থাকায় ডাক্তাররা সাধারণত অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হতে চান না।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও পেইন ফিজিসিয়ানস (বিএসএসিসিপিপি) জানিয়েছে, দেশে প্রায় দুই হাজার ৪০০ জন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট আছেন।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব সোসাইটিজ অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টস নামে একটি বৈশ্বিক সংস্থার মতে, প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য অন্তত পাঁচজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে এক লাখ মানুষের জন্য একজনেরও কম অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছে।
বিএসএসিসিপিপির মহাসচিব অধ্যাপক কাওসার সর্দার দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের দেশে এই খাতকে সব সময়ই অবহেলা করা হয়েছে। সার্জন ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তুলনায় অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা খুবই কম উপার্জন করেন। কিন্তু তারা যে কাজটি করেন, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি আরও জানান, উন্নত দেশগুলোতে অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা অনেক বেশি বেতন পান। ‘ঢাকার বেশিরভাগ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারগুলোতে সুষ্ঠু উপকরণ ও ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে কোনো মানদণ্ডই মেনে চলা হয় না’, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সার্জারির ক্ষেত্রে একেবারে শেষ মুহূর্তে অ্যানেসথেসিওলজিস্টকে ডাকা হয়। ততক্ষণে রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে আসা হয়েছে।’
এ কারণেই অ্যানেসথেসিয়ার ভুল প্রয়োগে মৃত্যুর ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে সাধারণ প্রক্রিয়া হলো—একজন রোগীকে প্রি-অ্যানেসথেসিয়া চেকআপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে চিকিৎসকরা ঝুঁকি চিহ্নিত করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, অনেক দেশে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পেশাদার অ্যানেসথেসিওলজিস্ট গড়ে তোলার প্রথা রয়েছে।
সরকার চাইলে একটি কোটা তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আনুপাতিক হারে শিক্ষার্থীদের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে না। তারা ভাবতে পারেন, ‘তাদেরকে নিজ ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও জানান, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন, তা নির্ধারণ করার সময় সামাজিক পরিচিতি, আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলো মাথায় রাখে।
‘অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা যাতে উপযুক্ত সম্মানী পান, তা নিশ্চিত করতে হবে’, যোগ করেন খুরশীদ আলম। বিএসএসিসিপিপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ে অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের জন্য ২১৩টি সরকারি পদ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০৭টি পদ বর্তমানে খালি আছে।
অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা দাবি করেন, তারা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বড় আকারে বেতন বৈষম্যের শিকার হন। বেশিরভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের অর্থ উপার্জনের জন্য সার্জনদের ওপর নির্ভর করতে হয়।
বারডেমের অনারারি কনসালট্যান্ট অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু কেউ অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না। আমাদের সমাজে সার্জনদের যেভাবে সম্মান করা হয়, একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট সেই সম্মানটা পান না।’
আপনার মতামত জানানঃ