নিজ বাড়িতে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা থেমে যায়। এমতাবস্থায় উপায়হীন হয়ে শেষে নবজাতকক শিশুকেই বিক্রি করে দেন। গতকাল শনিবার (৯ জানুয়ারি) হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ১৬ দিন আগে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী তেঘরিয়া গ্রামের রহিম উদ্দিনের স্ত্রী আকলিমা বেগম নিজের বাড়িতে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। এ সময় চিকিৎসার জন্য ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। তিনি টাকার ব্যবস্থা করতে স্বজনদের কাছে যান। স্বজনদের কাছে টাকা চেয়ে না পেলে নবজাতকের বাবা রহিম উদ্দিন সন্তানকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানার পর একই ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে আসা নবীগঞ্জ উপজেলার ওয়াখাল চরগাঁও গ্রামের আছকির মিয়া ৬ হাজার টাকায় ওই সন্তানকে কিনে নেন।
নবজাতকের বাবা রহিম উদ্দিন জানান, ১৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। এর আগেও তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। তার স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে ৮ জানুয়ারি সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। স্ত্রীর জন্য ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারায় স্ত্রীকে বাঁচাতেই সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
নবজাতকের মা আকলিমা বেগম বলেন, টাকার জন্য নিজের চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয় স্বজনের কাছে ঘুরেও টাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
সন্তান কিনে নেয়া আছকির মিয়ার বোন শামসুন্নহার বেগম বলেন, আমার ভাই বিয়ে করেছেন ১৮ বছর আগে। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান হয়নি। শনিবার হাসপাতালে এলে শুনি একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। পরে আমার ভাই বাচ্চাটি কিনে নেয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিনে নেয়া দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বাচ্চাকে ফিরিয়ে আনেন। পরে রাত সাড়ে ৯টায় শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, হাসপাতাল থেকে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তান বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। জানার পর পুলিশের সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সদর থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, যারা বাচ্চা কিনে ছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর পর আমরা বাচ্চাকে তার মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০৬
আপনার মতামত জানানঃ