দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের দেশ চিলি। চিলিতে অবস্থিত আতাকামা মরুভূমি হলো পৃথিবীর শীত উপকূলবর্তী মরুভূমিসমূহের একটি। এর একপাশে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর ও অন্য সবদিক ঘিরে রেখেছে পেরু, বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনা।
প্রায় ৪০০ বছর বৃষ্টি হয়নি একফোঁটাও, পৃথিবীর প্রাচীনতম মরুভূমি আতাকামা, মঙ্গলগ্রহের মাটির সঙ্গে রয়েছে অদ্ভূত মিল।
আতাকামা মরুভূমির মূল আয়তন এক লক্ষ পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এই মরুভূমির অধিকাংশ জায়গাই পাথুরে ভূমি, ধুসর বালি, লবণ হ্রদ এবং ফেলসিক লাভা দিয়ে ঢাকা। এখানকার বৃষ্টিপাতের ইতিহাস বেশ করুণ। ধারণা করা হয়, ১৫৭০ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে তেমন কোনো বৃষ্টি হয়নি।
এই অঞ্চলের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রতি বছরে প্রায় ১ মিলিমিটার। তবে মরুভূমির মধ্যে এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে কখনো বৃষ্টিপাত হয় না। আবার কিছু স্থানে, যেমন, আরিকা এবং ইকুইকে, এক বছরে ১ থেকে ৩ মি.মি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়ে থাকে।
সৌরজগতের উজ্জ্বলতম গ্রহ শুক্র। কিন্তু তাকে টেক্কা দিতে পারে পৃথিবীর এক মরুভূমি। কারণ শুক্রগ্রহের প্রায় সমান সূর্যকিরণ এসে পড়ে এই মরুভূমিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে রৌদ্রকরোজ্জ্বল অংশ এই মরুভূমি।
দক্ষিণ আমেরিকার চিলের আন্দিজ পর্বত সংলগ্ন যে বিস্তীর্ণ মালভূমি অঞ্চল, তার অন্তর্গত আতাকামা মরুভূমিই পৃথিবীর বুকে অবস্থিত সবচেয়ে রৌদ্রকরোজ্জ্বল এলাকা। উচ্চতা প্রায় ১৩ হাজার ১২০ ফুট। নিরক্ষরেখা সংলগ্ন এলাকার থেকেও বেশি আলো পায় এই মরুভূমি।
পৃথিবীর প্রাচীনতম মরুভূমিও আতাকামা। প্রতি স্কোয়্যার মিটারে সেখানে সর্বোচ্চ ২১৭৭ ওয়াট সৌরশক্তি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের বিকিরণ সেই নিরিখে প্রতি স্কোয়্যার মিটারে ১৩৬০ ওয়াট।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর তুলনায় শুক্রগ্রহ ২৮ শতাংশ বেশি সূর্যের কাছাকাছি। তার পরেও আতাকামা মরুভূমিতে সৌর বিকিরণের মাত্রা প্রতি স্কোয়্যার মিটারে গড়ে ৩০৮ ওয়াট, যা মধ্য ইউরোপ এবং আমেরিকার পূর্ব উপকূলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সৌর বিকিরণ যখন পৃথিবীতে প্রবেশ করে, জলীয়বাষ্প প্রথমে তা শুষে নেয় এবং মেঘে মেঘে ছডি়য়ে পড়ে। কিন্তু যে সমস্ত জায়গার উচ্চতা বেশি, তা জলীয়বাষ্পের স্তর থেকেও উপরে। মেঘও সেখানে তুলনামূলক কম। তাই সেখানে আলো বেশি পড়ে।
ভৌগলিক অবস্থানও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত চিলে। জানুয়ারির শুরুতে পৃথিবীর কক্ষপথ যখন সূর্য়ের থেকে অনুসূর অবস্থানে পৌঁছয়, সেই সময় উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে ৭ শতাংশ বেশি আলো পড়ে।
তবে সূর্যের বেশি আলো পড়ার নেতিবাচক দিকও রয়েছে। আতাকামায় বিকিরণ বেশি হওয়ায়, ত্বকের ক্ষতি হয়, তা থেকে প্রাণঘাতী রোগ পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে বিকিরণ কত বেশি, তার পরিসংখ্যান সামনে এনেছে একটি সমীক্ষা।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, আতাকামা পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমি। সেখানে এমন কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে কখনও বৃষ্টিই হয়নি। গবেষণায় দেখায় গিয়েছে ১৫৭০ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত, এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি আতাকামায়।
আতাকামার যে অংশে বৃষ্টি হয়, তার পরিমাণও যৎসামান্যই, বছরে ১মিলিমিটার। একদিকে আন্দিজ পর্বতমালা এবং অন্য দিকে উপকূলীয় শৃঙ্গ, দুইয়ের মাঝে অবস্থিত আতাকামা। জলীয়বাষ্প প্রবেশই করে না। ফলে জমি সবরকম চাষেরই অনুপযুক্ত।
তবে আতাকামা বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক সোডিয়াম নাইট্রেট সরবরাহকারী মরুভূমি, যা থেকে সার তৈরি হয়, বিস্ফোরক তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। চারের দশকে সেখানে সবচেয়ে বেশি খননকার্য চলে।
শুধু তাই নয়, মঙ্গলগ্রহের মাটির সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে আতাকামা মরুভূমির মাটির। তাই মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর আগে, আতাকামায় পরীক্ষানিরীক্ষা চালায় নাসা। মঙ্গলগ্রহকে নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা, সিরিয়ালের শ্যুটিংও হয় এই আতাকামা মরুভূমিতে।
তবে এই অনাবৃষ্টির মাঝেও মরুভূমিটির প্রাকৃতিক কিছু ক্ষমতা রয়েছে। এর বালির নিচে জমা থাকে হাজার হাজার ফুলের বীজ। যখন বৃষ্টি হয়, তখন পানি মরুভূমির বালির নিচ অবধি চলে যায়। বৃষ্টির পানি পেয়ে বালির নিচে সুপ্ত বীজগুলোর মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। ধীরে ধীরে শেকড় ও পাতা গজিয়ে বড় হতে থাকে এই গাছ। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বেশ দ্রুতই বড় হয় এ গাছগুলো।
বালির নিচে পানি জমে থাকে বলে এদের বেড়ে উঠতে তেমন সমস্যা হয় না। ধীরে ধীরে গাছে হলুদ, সাদা, গোলাপী, লাল বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে থাকে। ফুল গাছগুলো বড় হয়ে উঠলে এক সময় গোলাপী ফুলে ঢাকা গালিচার রূপ ধারণ করে অঞ্চলটি।
এসডব্লিউএসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ