ওড়িশার বালাসরে ছোট্ট শহর চাঁদিপুর। এখানেই আছে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এখান থেকেই উৎক্ষেপণ হয়েছে ব্রহ্মা, তেজস, অগ্নির মতো মিসাইলগুলো। পাকিস্তান হানা দিয়েছে এই কেন্দ্রে। রীতিমতো হানিট্র্যাপ বিছিয়ে, যৌনতার প্রলোভন দেখিয়ে হস্তগত করে নিয়েছে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এই কাজে সহায়তা করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুকে সুন্দরী মহিলার ছবি দিয়ে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর দুই এজেন্ট। বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার এক কর্তার সঙ্গে। সেই ফাঁদে পড়ে তথ্য পাচারের দায়ে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হতে হল ওই বায়ুসেনা অফিসারকে। দিল্লি পুলিশের হাতে ধৃত অফিসারের নাম অরুণ মারওয়া।
ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে। ফেসবুকের দুই ফেক প্রোফাইল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনা কর্তার সঙ্গে চ্যাটিং শুরু হয়। তার পর হোয়াট্সঅ্যাপেও আদানপ্রাদান চলতে থাকে নিয়মিত। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে।
এক সময় সুন্দরী পাক তরুণীর উত্তেজক নীল ছবির ফাঁদে পড়েন বাবুরাম দে নামের ৫১ বছরের টেকনিক্যাল অফিসার। তিনি দুর্বল মুহূর্তের বহু তথ্য, যা একান্ত গোপনীয়, তা ফাঁস করে দেন তরুণীর হাতে।
আই জি হিমাংশু লাল জানান যে, দীর্ঘদিন ধরে বাবুরাম দে এই তথ্য সরবরাহ করে আসছেন। বালাসরের এসপি সাগরিকা নাথ জানিয়েছেন, তাদের আশংকা শুধু যৌনতাই নয়, আর্থিক লেনদেনও করেছেন বাবুরাম দে।
তরুণী পাক গুপ্তচর সংস্থা আই এসআইএ’র সদস্য। মোবাইল ফোনে বাবুরামের সঙ্গে উত্তেজন কথোপকথনে অংশ নিত সে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বাবুরাম অগ্নি, তেজস বা ব্রহ্মা সম্পর্কে কোনও গোপন তথ্য পাকিস্তানকে পাচার করতে পারেন।
বাবুরামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জেরা চলছে। ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই চাঁদিপুর মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় চরবৃত্তির অভিযোগে। এরপর এই হানিট্র্যাপ। পাকিস্তান যে চাঁদিপুরের মিসাইল কেন্দ্রকে তাদের টার্গেট করেছে তা বলাই বাহুল্য।
মাত্র ৬-৭ মাস আগে অভিযুক্তের মোবাইলে এক নারীর কল আসে; তারপর থেকেই দুজনের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়।
জানা যায়, ওই নারীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করতেন প্রদীপ। ভয়েস কল এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলতেন তারা। এই নারী প্রদীপ কুমারকে বলেছিলেন, তিনি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা।
তিনি নিজেকে বেঙ্গালুরুতে এমএনএস-এ পোস্ট করার কথা বলেছিলেন। নারী এজেন্ট প্রদীপ কুমারকে দিল্লিতে দেখা করতে এবং বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন।
এরপর সেনাবাহিনীর গোপন নথির ছবি চাওয়া শুরু করেন ওই নারী। প্রদীপ কুমার গোপনে তার অফিস থেকে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত একটি গোপন নথির ছবি তার মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সেই নারী এজেন্টের কাছে পাঠান।
এ নিয়ে প্রদীপকে ১৮ মে বিকেলে সেনা সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। জয়পুরের জয়েন্ট ইনকোয়ারি সেন্টারে সব সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রদীপ কুমারকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, তিন বছর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন প্রদীপ। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে গানার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি যোধপুরের গুরুত্বপূর্ণ সেনা রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বছর ৫১-র অরুণ মারওয়া দিল্লিতে বায়ুসেনার প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতেন। ভারতীয় বায়ুসেনার প্যারা-জাম্পিং ইনস্ট্রাকটর এবং গরুড় কম্যান্ডোর প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন মারওয়া। আগামী বছরেই অবসর নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, মারওয়ার বিরুদ্ধে সন্দেহটা দানা বেঁধেছিল কয়েক সপ্তাহ আগে। বায়ুসেনার এক শীর্ষ আধিকারিকের নজরে বিষয়টি আসার পরই শুরু হয় অন্তর্তদন্ত। উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের মারাত্মক অভিযোগ। গত ১০ দিন ধরে বায়ুসেনার কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স উইং মারওয়াকে জেরা করে। তার পরই তারা দিল্লি পুলিশের হাতে মামলাটি তুলে দেয়।
বৃহস্পতিবার বায়ুসেনার প্রধান কার্যালয় থেকেই মারওয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। পুলিশের দাবি, মারওয়াকে যখন গ্রেফতার করা হয়, সে সময় তাঁর কাছে একটা মোবাইল ফোন ছিল, যা বায়ুসেনার কার্যালয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এসডব্লিউএসএস/১৭০৮
আপনার মতামত জানানঃ