ভারতে প্রথম বার হদিস পাওয়া গিয়েছে লিথিয়ামের।- সূত্র আনন্দবাজার। ভারতের কাছে এ এক বিরাট প্রাপ্তি বটে। যে সাদা সোনার জন্য এ যাবৎ কাল অন্য দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকেছে, সেই মূল্যবান সম্পদ এ বার এলো ভারতের হাতে। যার জেরে আগামীতে বদলাতে পারে দেশটির ভবিষ্যৎ। সেই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতির চাকাও ঘুরতে পারে। এমনটাই মনে করছেন উপত্যকাবাসী।
জম্মু ও কাশ্মীরের রেয়াসি জেলায় লিথিয়ামের ভান্ডারের হদিস পেয়েছে দেশের ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ। ৫৯ লাখ টন লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সেখানে। পরিমাণটা কিন্তু মোটেই কম নয়। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রথম বার যে এই পরিমাণ লিথিয়ামের খোঁজ পাওয়া গেল, তা উল্লেখযোগ্য।
ভারতে যে পরিমাণ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে, তার বাজারমূল্য তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। তবে এই অঙ্ক বদলে যেতে পারে বিশ্ববাজারে লিথিয়ামের দামের উপর নির্ভর করে।
এতো দিন আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ‘সাদা সোনা’ আমদানি করত ভারত। এবার দেশেই তার সন্ধান পাওয়ায় ভারত অনেকটা আত্মনির্ভর হবে বলে মনে করছে সরকার। বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি লিথিয়ামের ভান্ডার রয়েছে, তার মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ভারত।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের এক তালিকা সূত্রে এই তথ্য জানা গিয়েছে। এটা প্রযুক্তির যুগ। যতো দিন গড়াচ্ছে, ততই প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বাড়ছে। এই অবস্থায় একসঙ্গে এতো পরিমাণ লিথিয়ামের খোঁজ পাওয়া ‘অমূল্য রতন’ পাওয়ার মতোই। কেননা, বৈদ্যুতিন গাড়ি, স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপে যে ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো লিথিয়াম।
শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও লিথিয়ামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দূষণ রুখতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। আর এমন গাড়ির জন্য যে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়, তা হলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। ফলে দেশে লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া যাওয়ায় আশা জুগিয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পমহলে। দেশে লিথিয়াম থাকলে ব্যাটারির খরচ কমবে।
এতে লাভবান হবেন উপত্যকাবাসীও। লিথিয়াম উত্তোলন শুরু হলে রয়্যালটি পাবে জম্মু ও কাশ্মীর। খুলে যাবে লগ্নির দরজাও। যার জেরে ভূস্বর্গের অর্থনীতির চাকা ঘুরতে পারে বলে আশা।
বছরভর জঙ্গি হামলায় তেতে থাকে দেশের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। উপত্যকার সৌন্দর্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। কিন্তু বার বার হামলায় রক্ত ঝরার পর উপত্যকায় সফর নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন।
পর্যটন নির্ভর এই এলাকায় লিথিয়ামের ভান্ডারের হদিস আর্থিক ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে পারে বলে মনে করছে শিল্পমহল। ভারতে প্রথম লিথিয়াম পাওয়ার স্থান হিসাবে আলাদা প্রাপ্তি হবে জম্মু ও কাশ্মীরের। রয়্যালটি বাবদ যা আয় হবে, তা এলাকার অর্থনীতিতে গতি আনবে। যার ফলে আর্থিক দিক থেকে দেশের ভিতও আরো মজবুত হবে।
‘সাদা সোনা’কে নিয়ে শিল্পমহলের মতো আশায় বুক বেঁধেছেন সে রাজ্যের বাসিন্দারাও। বিশেষ করে রেয়াসি এলাকার বাসিন্দারা। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। এলাকার নায়েব সরপঞ্চ রাজিন্দর সিংহ বলেছেন, ‘এর ফলে শুধু কর্মসংস্থানেরই সুযোগ বাড়বে তাই নয়, আন্তর্জাতিক মানচিত্রেও জায়গা করে নেবে এই এলাকা। ফলে গতি পাবে পর্যটন ক্ষেত্রও।’
তবে লিথিয়াম খনন করার কাজ খুব একটা সহজ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লিথিয়াম খননের কাজ পরিবেশবান্ধব নয়। তবে শেষ পর্যন্ত যদি এই লিথিয়াম খনন করে কাজে লাগানো যায়, তা হলে বদলে যাবে ভারতের ভবিষ্যৎ।
জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান পঙ্কজ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অনেক মূল্যায়ণের প্রয়োজন। খননের কাজ শুরুর আগে এই পুরো প্রক্রিয়া করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগবে।’
লিথিয়ামকে ঘিরে যেমন আশোর আলো দেখেছেন উপত্যকাবাসী, তেমনই এর জন্য সমস্যায় পড়তে হতে পারে তাদের। খননের কাজ শুরু হলে রেয়াসি এলাকায় ৬০টিরও বেশি বাড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন জেলা খনির আধিকারিক শাফিক আহমেদ।
লিথিয়ামের খনি নিলামের আগে অনেক কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। এই মুহূর্তে এ নিয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছে ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ, ভূতত্ত্ব বিভাগ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের খনি বিভাগ। এই কথা জানিয়েছেন ডেপুটি কমিশনার বাবিলা রাকওয়াল।
খননের কাজ শুরু হলে ধসের ঝুঁকিও রয়েছে। জম্মুর ‘ক্লাইমেট ফ্রন্ট’-এর সদস্য আদিত্য খাজুরিয়া বলেছেন, ‘জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একাধিক এলাকায় প্রায়ই ধস নামছে। রেয়াসিতে খননের কাজের জন্য পরিবেশের ক্ষতি যাতে না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার।’
ঝুঁকি আছে ঠিকই। লিথিয়াম খনন যাতে সুষ্ঠু ভাবেই করা যায়, সে দিকেই নজর দিচ্ছে প্রশাসন। লিথিয়ামকে ঘিরে বদলের অপেক্ষায় রয়েছেন উপত্যকাবাসী।
এসডব্লিউএসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ