পুলিশের সাথে বিএনপির সংঘর্ষ এদেশের রাজনীতিতে নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির সভা সমাবেশ হোক বা মিছিল হোক, পুলিশ বাধা দেবেই। এই বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষও প্রায় নিশ্চিত ঘটনা। আর এতে আহতের পাশাপাশি নিহত হবার ঘটনাও কম নয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিল কেন্দ্র করে আজ শনিবার দুপুরে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আবদুর রশিদ আরেফিন (৫০) নামের বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তি বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বলে জানিয়েছে দলটি। এ ছাড়া সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পাশাপাশি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে।
সূত্র মতে, আহত নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত আবদুর রশিদ আরেফিনের লাশ ওই হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। এতে আমাদের আবদুর রশিদ আরেফিন নামের একজন মারা গেছেন। এ ছাড়া আমাদের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
এদিকে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিলের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় আমরা তাঁদের সড়ক বন্ধ করতে নিষেধ করি। তাঁরা কথা না শুনে সড়ক বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। তবে কেউ মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির কার্যলয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হয় দলীয় নেতা কর্মীরা। জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে দুপুর সোয়া ২টায় মিছিল বের করা হলে পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। এরপর পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
এ সময় কাঁদানে গ্যাস, টিয়ারসেল, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে দলটির স্থানীয় এক নেতা নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশত। বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়ক সমূহ বন্ধ থাকে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ, বিএনপির নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরে গণমিছিল কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি মিছিলের আয়োজন করে। বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হন। সড়কে মিছিল বের করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিএনপির নেতা-কর্মীদের।
একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে জেলা শহরের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলতে থাকলেও সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের মারধরও করেছে। বিএনপি নেতারা জানান, পুলিশের টিয়ারশেল ও লাঠির আঘাতে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ