রামুতে দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপের ২৬ দিন পরও প্রধান অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ২৫ দিন পরও চমেক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে টিপু বড়ুয়া। গত ২৫ অক্টোবর রাতে টিপু বড়ুয়া তার চাচাতো ভাই দিপক বড়ুয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে চৌমুহনী স্টেশনে নিখিল বড়ুয়া ও অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জন লোক তাদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে।
এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়ার স্বজনরা জানিয়েছেন- নিখিল বড়ুয়া বর্তমানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নিখিল বড়ুয়া গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেন তারা।
২৮ অক্টেবার পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে অভিযুক্ত করে রামু থানায় মামলা করেন অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়ার মা প্রকৃতা বড়ুয়া। ২০০২ সালের অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের ৫ (খ)/৭ ধারায় দায়েরকৃত এ মামলায় কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে এজাহারভুক্ত এবং অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়।
গত ২৫ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারের রামুর চৌমুহনী স্টেশনে এ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ দুজন হলেন টিপু বড়ুয়া (৩৪) ও দীপক বড়ুয়া (৩২)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তাদের বাড়ি রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামে।
এ ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াকে প্রধান আসামি করে রামু থানায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন আহত টিপুর মা প্রকৃতা বড়ুয়া (৪৯)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
মামলার পর নিখিল বড়ুয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি একই ইউনিয়নের হাজারীকুল গ্রামে। তিনি এখন বিভিন্নভাবে হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়া নিজের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। দুজন রামু চৌমুহনীর ভিক্টর প্লাজার বিপরীতে জাহেদ হোসেনের মার্কেটের সামনে রাস্তায় পৌঁছালে নিখিল বড়ুয়াসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এসে দুজনকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরে পালিয়ে যান।
অ্যাসিডে টিপু ও দীপকের মুখ, চোখের গোড়া, গলা, হাত, পিঠ ও গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মক জখম হয়। আহত ব্যক্তিদের প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নিখিল অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে টিপু বড়ুয়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বার্ন ইউনিটের ৫ নম্বর শয্যায় এবং দীপক বড়ুয়া ৬ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। দুজনই সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বাদী প্রকৃতা বড়ুয়া বলেন, নিখিল বড়ুয়া প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাতে পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া পলাতক বলে দাবি করেছেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাত দিন আগে নিখিল বড়ুয়াকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিখিল বড়ুয়ার গ্রেপ্তারের দাবিতে রামুতে ২৯ অক্টোবর থেকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিৎময় বড়ুয়া।
পুলিশ জানায়, এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৩ নভেম্বর রিপন বড়ুয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামু থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আমীর হোসেন।
ফতেখাঁকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভুট্টো বলেন, অপরাধী পুলিশ সদস্য হউক বা অন্য কেউ হউক, অপরাধীরা দেশ ও সমাজের শত্রæ। তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। তিনি বলেন,রামুতে এসিড সন্ত্রাসের মত ঘটনা কোন দিন ঘটেনি। এটি শান্ত রামুকে কলংকিত করেছে।
কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া’র বিরুদ্ধে আরও একাধিক প্রতারণা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ করেন টিপু বড়ুয়া’র পরিবার। টিপু বড়ুয়া’র চাচা বিমল বড়ুয়া জানান, কনস্টেবল হয়েও এএসআই পরিচয়ে আইডি কার্ড নিয়ে চাঁদাবাজি, আসল পিতা রাজারকুল গ্রামের সীতানাথ বড়ুয়া হলেও পিতার নাম বদলে প্রদীপ বড়ুয়া বলে ভুয়া পরিচয়ে পুলিশের চাকরী নেওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক মেয়েকে বিয়েসহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও নিলিখ বড়ুয়া এখনো বেপরোয়া হয়ে নানান হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/২০:৫৫
আপনার মতামত জানানঃ