বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিবে গুজরাটের দুই জেলা। উল্লেখ্য, বিতর্কিত সিএএ আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের উল্লেখ থাকলেও এবার নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর অধীনে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
গুজরাটের দুই জেলায় বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও ক্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
মূলত আসন্ন গুজরাটের ভোট। তার আগেই প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত অ-মুসলমানদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সোমবারই জারি হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। তবে আপাতত, গুজরাটের দুই জেলা- মেহসানা ও আনন্দেই এই নাগরিকত্ব প্রদান কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে মেহসানা ও আনন্দ জেলার জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা, পাকিস্তান আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে এই দুই জেলায় আগত (২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত) হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রীষ্টান ও পার্শিদের আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিতে পারেন।
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ, ‘১৯৫৫সালের নাগরিকত্ব আইনের ১৬ নম্বর ধারা ও ২০০৯ সালের নিয়ম অনুসারে এই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। ১৯৫৫ নাগরিকত্ব আইনের এর অধীনে ৬ নং ধারা অনুযায়ী নাগরিকরা সংশাপত্র পাবেন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সংখ্যালঘু অ-মুসলমান ৬ সম্পদায়ের মানুষ যেমন, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি এবং খ্রিস্টান যারা এদেশের গুজরাট রাজ্যের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী, তাঁদের ওই দুই জেলার কালেক্টরনাগরিকত্ব প্রদান করবেন।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর অধীনে গুজরাটের মেহসানা ও আনন্দ জেলার এই বিদেশি নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব সনদ প্রদান করবে। তবে এটি ২০১৯ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-র আওতাধীন নয়।
সিএএ আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের উল্লেখ থাকলেও সেই বিধান এখনও কাঠামোকরণ করা যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত সিএএ-র আওতায় কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে কিছু নিয়মের কথাও বলা হয়েছে। যেমন- আবেদন অনলাইনে করতে হবে। আবেদনের যাচাইকরণ করা হবে জেলা স্তরে কালেক্টর দ্বারা। অনলাইন পোর্টালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একযোগে আবেদনগুলি অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। জেলা কালেক্টর আবেদনকারীর যতার্থতা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক খতিয়ে দেখতে সক্ষম।
চলতি বছর আগাস্টে, গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভি আমেদাবাদ কালেক্টরেটে ৪০ জন পাকিস্তানি হিন্দুকে ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র হস্তান্তর করেছিলেন। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০১৭ সাল থেকে, জেলা কালেক্টর কর্তৃক মোট ১০৩২ জন পাকিস্তানিকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আমেদাবাদ, গান্ধীনগর এবং কচ্ছের জেলা কালেক্টরদের আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি এবং খ্রিস্টান সহ সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় উভয় সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো টিম দ্বারা স্ক্যান করা হয়ে থাকে।২০২২ সালে, এখনও পর্যন্ত ১০৭ পাকিস্তানি হিন্দুকে আমেদাবাদ জেলা কালেক্টর ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য এ দেশের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু এখনই তা সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হয়নি। মোদী সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সিএএ কার্যকর করার সময়সীমার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যসভা ও ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লোকসভার সংসদীয় কমিটি বাড়িয়েছে।
এর আগে গত আগস্টে গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি আহমেদাবাদে ৪০ জন হিন্দু পাকিস্তানির হাতে নাগরিক সনদ তুলে দেন। ২০১৭ সাল থেকে জেলাটিতে এক হাজার ৩২ জন পাকিস্তানিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রসঙ্গত, মুসলিম দেশগুলি থেকে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য তৈরি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখনও বলবৎ করা হয়নি। ফলে এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। এখনই কার্যকর হচ্ছে না সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ। মোদি সরকারের আবেদনে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে রাজ্যসভা। ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ পর্যন্ত তা বাড়িয়েছে লোকসভার সংসদীয় কমিটি।
উল্লেখ্য, নাগরিকপঞ্জি আর সিএএ নিয়ে অনেকদিন ধরেই সরব দেশটির বুদ্ধিজীবী মহল। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। বলিউডে যেমন অনুরাগ কাশ্যপ, স্বরা ভাস্কররা আওয়াজ তুলেছেন, তেমনই বাংলা থেকে অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, সোহাগ সেন, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋদ্ধি সেন পথে নেমে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ হয়েছে দেশজুড়ে। পালটা গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, মুসলিম দেশগুলিতে অত্যাচারিত হিন্দু, শিখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের বাঁচাতেই এই আইন আনা হয়েছে। এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কেড়ে নেওয়ার নয়। সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক বাঁচাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিষয়টির বিরোধিতা করছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ