যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুদিন যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চলতি বছর শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে বাংলাদেশের। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি–মে) দেশটিতে ৪১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার সমান। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের দুর্দান্ত শুরু
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৭১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তখন বাজার হিস্যা ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে সেই হিস্যা বেড়ে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। যদিও এই বাজারে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা যথাক্রমে ৪২ ও ৩৩ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য মিলেছে। অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৯৩ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ওই সময়ের মধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তাতে বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়।
২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। তবে করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ২০২০ সালে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে রপ্তানি আবার বাড়তে থাকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হিসাব অর্থবছর ধরে প্রকাশ করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রেকর্ড পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৯০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা দেশীয় মুদ্রায় ৮৪ হাজার ১৯৮ কোটি ডলার।
এই রপ্তানি গত ২০২০–২১ অর্থবছরের তুলনায় ৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। ২০২০–২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল ৫৯৪ কোটি ডলারের পোশাক।
অন্যান্য দেশের অবস্থান
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বরাবরের মতো এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চীন এগিয়ে আছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৮২৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন চীনের ব্যবসায়ীরা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে তারা রপ্তানি করেছে ৭৬৩ কোটি ডলারের পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া।
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারত ২৬৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ২৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার বড় কারণ, গত দুই বছরে ওভেন পোশাকের পাশাপাশি আমাদের নিট পোশাকও ব্যাপকভাবে যাচ্ছে। আমাদের অনেক কারখানা বর্তমানে ইউরোপের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি নিট পোশাক রপ্তানি করছে। এটি খুবই ইতিবাচক।
ফজলুল হক আরও বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই বেশি কিনছেন মার্কিন নাগরিকেরা। সে কারণে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।
তাই সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ালমার্ট, গ্যাপের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে। চলমান ক্রয়াদেশও বিলম্বে জাহাজীকরণ করতে বলছে। তাতে আপাতত মনে হচ্ছে, বিদায়ী অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরে ধরে রাখাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ