ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। আসন্ন ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলে রাইডশেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত বাইক নিয়ে চলাচলকারীদের যাত্রাপথে হয়রানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ মঙ্গলবার(০৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানিয়েছেন।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালুর পর দেশে মোটর সাইকেল চলাচল অনেক বেড়েছে। এরপর গত ঈদে দূর যাত্রায়ও মোটর সাইকেলের যাত্রী হন অনেকে। আবার এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটর বাইককেও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার কোরবানির ঈদের আগে-পরে মোট সাত দিন মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। সেই সঙ্গে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটর সাইকেল যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাইড শেয়ারের বাইক অন্য স্থানে চালানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এনিয়ে বাইকারদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাইডশেয়ারকারী মোটরসাইকেলের সঠিক কোনো সংখ্যা বা ডেটাবেস বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। ফলে কোনটি রাইডশেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল, কোনটি ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল তা আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। চলার পথে কোথাও কোথাও সড়কের মাঝপথে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চেকিং করার দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। এ ধরনের চেকিংপদ্ধতি সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গণপরিবহন সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করে এই বাহনটির স্পিড লিমিট করে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি এই বাহনটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
তাই উৎসমূলে যানজট তৈরি না হয় এমন নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিং করা, চেকিংয়ের নামে অহেতুক কোনো বাইকার যাতে হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে। গণপরিবহন সংকট, বাসমালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে ক্রমে ক্রমে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনটি কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। তবু পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের আদলে গণপরিবহনের সংখ্যা কমানোর মধ্য দিয়ে যানজট কমাতে দেশে রাইডশেয়ারিং চালু করা হলেও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মনিটরিংয়ের অভাবে এসব রাইডশেয়ারকারী যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তার আগে গণপরিবহন সংকট সমাধান করা, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বিগত ঈদুল ফিতরে প্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামার কারণে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা লক্ষ করা গেলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাই আপাতত গণপরিবহন সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করে এই বাহনটির স্পিড লিমিট করে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি এই বাহনটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
একই সঙ্গে দেশের গৌরব ও অহংকারের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের স্পিড লিমিট নির্ধারণ করে সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ঈদের আগে মোটরসাইকেল চালুর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০৮
আপনার মতামত জানানঃ