জামিসের বয়স এখন ২৫ বছর। তবে পুরুষ হিসেবে তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। এর আগে মেয়ে ছিলেন তিনি। শুনতেই বিষয়টি অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে তার মতো পুরো গ্রামের সবারই একই অবস্থা! গ্রামটিতে মেয়েরা শৈশবকাল পার করলেই ছেলে হয়ে যায়। কোনো রূপক বা আলংকারিক অর্থে নয়, শারীরিক ভাবে তারা পাল্টে যায় পুরুষে।
গ্রামটির নাম সালিনাস। এটি ডমিনিকান রিপাবলিকের দক্ষিণ-পশ্চিমে বারাভোনা প্রভিন্সের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। কয়েক শ’ বছর ধরে প্রত্যেক মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটছে। তবে এর নেপথ্য কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গ্রামের মেয়েদের এক ধরনের শারীরিক ত্রুটির কারণে এমনটা ঘটছে। বাচ্চারা যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখনই এই ত্রুটির প্রভাব পড়তে শুরু করে তাদের শরীরে। গর্ভাবস্থায় একটি বিশেষ এনজাইমের অভাবেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
জামিস বলেন, আমি ছোটবেলায় স্কুলে যেতাম স্কার্ট পরে। মাথায় বেণি থাকত। কোনো দিনই অবশ্য একটা মেয়ের মতো মনে হয়নি নিজেকে। কিন্তু ১২ বছর বয়স থেকে আমার পুরুষাঙ্গ আকারে বাড়তে থাকে। আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে, আমি এক জন পুরুষ। এখন সমাজের চোখেও আমি একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ।
১৯৭০ সালে গ্রামটির এই অদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয়টি প্রথম আবিষ্কার করেন ডা. মাইকেল মোসলে। তিনি বলেন, সাধারণত গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহ নাগাদ শিশুর শরীরের যৌনাঙ্গ পরিস্ফুট হতে শুরু করে।
ডিহাইড্রো টেস্টোস্টেরন নামের একটি হরমোনের প্রভাবে গর্ভস্থ শিশুদের পুং জননাঙ্গ পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এই হরমোনকে আবার সক্রিয় করে তোলে একটি বিশেষ ধরনের এনজাইম। কিন্তু সালিনাস গ্রামের মায়েদের গর্ভকালীন পুষ্টির অভাবের কারণেই এই এনজাইম তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্ষরণ হতে পারে না। ফলে যারা আদতে পুরুষ শিশু, জন্মের সময়ে তাদের পুরুষাঙ্গ ঠিকমতো গঠিত হয় না।
জামিসকে যেমন সবাই ১২ বছরের আগে বলত মেয়ে। পুরুষাঙ্গ গঠিত হওয়ার পর তাকে এখন সবাই ছেলে বলে মানতে শুরু করেছে। এই গ্রামের নিয়ম এটাই। ১২ বছর না হলে বোঝা মুশকিল, সে মেয়ে না ছেলে। স্থানীয়রা জানালেন, এই গ্রামের ছ’জনকে সবাই মেয়ে বলেই চিনত। তারা ফ্রক বা মহিলাদের অন্য কোনো পোশাক পরেই গ্রামে ঘুরত। চলতি বছর ১২-তে পা দিতেই তাদের পুরুষাঙ্গ গঠিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এখন সকলেই পুরুষ।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সালিনাস গ্রামের মানুষেরা বিয়ে করছেন অন্য গ্রামে। ফলে মিশ্র রক্ত নিয়ে তৈরি হওয়া সন্তানেরা স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্মাতে শুরু করেছে। গবেষকদের আশা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা গ্রামটিই এক দিন ত্রুটিমুক্ত হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৭
আপনার মতামত জানানঃ