পুলিশ সবচেয়ে বড় ভিলেনে পরিণত হয়েছে এই সময়ে। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মামলা হয়েছে এবং বিচার চলছে। এর মাঝেই আবার উঠল কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ। রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনিতে এক কিশোরীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কনস্টেবল শিমুল আহমেদকে (২৭) একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন শিমুল আহমেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মতিঝিল থানার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এ ঘটনায় সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) শিমুল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী কিশোরীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। ওই কিশোরী রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ধর্ষণের শিকার হয় বলে জানান।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর পুলিশ কনস্টেবল শিমুলকে গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলাও নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে।’
মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম জানান, এজিবি কলোনির একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। কিশোরীর বাবা-মা চাকরি করেন। তারা না থাকা অবস্থায় ওই ব্যক্তি বাসায় গিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে আনা হয়।’
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাওবা অস্ত্র বিক্রয়কারী হিসাবে, কোথাওবা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের নেতৃত্বে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি হেন কোনো অপরাধ নেই যা পুলিশ শব্দটির সাথে জুড়ে বসে নাই। প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ আসে। এমনকি আসছে ধর্ষণের অভিযোগও।
পুলিশ বিভাগের নিজস্ব রিপোর্টে দেখা গেছে, শুধু ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ১৩৩ জন কনস্টেবল ও এএসআই’এর লঘুদণ্ড ও ৪৮৯ জনের গুরুদণ্ড হয়েছে। একই সময়ে ৩৮ জন পুলিশ পরিদর্শকের লঘুদণ্ড ও ৮ জনের গুরুদণ্ড হয়েছে। গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাগীয় কোনো উপাত্ত পুলিশ প্রকাশ না করলেও ডিপার্টমেন্টাল শাস্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সদস্যরা নিজেরা কেন এভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের কাঠামো থেকে পুলিশ বাহিনী এখনো বের হতে পারেনি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি করা যায়নি তাদের কাঠামো। ১৮৬১ সালের আইন দিয়ে পুলিশ পরিচালিত হচ্ছে। এত দিনেও কাঠামোগত সংস্কার করা যায়নি।
বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে মূল সমস্যা খতিয়ে দেখতে হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। ব্যক্তিবিশেষকে দোষারোপ করে লাভ নেই। পুরো সিস্টেমটা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন ঘাট, প্রসিকিউসন, তদন্ত ব্যবস্থা আছে। বিসিএস দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ভালো অফিসার ও কাজ দেখালে হবে না, জবাববদিহিতা স্বচ্ছতা, জরুরি।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্ম পরিবেশ নিয়েও ভাবতে হবে। স্থানীয় এমপি, অর্থশালীদের সঙ্গে ওসিদের একটা আঁতাতের সম্পর্ক থাকে। তারা একজন আরেকজনকে প্রটেকশন দেয়। আর সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয়। ওসি, এসআই লেভেলে সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক জিয়া রহমান।
তিনি বলেন, তাদের বড় ধরনের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ জরুরি। তাদের আচার ব্যবহার সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চেইন অব কমান্ডে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর পুলিশ দিয়ে এই যুগে চলতে পারে না। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, শাস্তির ব্যবস্থা, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুততম সময়ে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ