উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে পৃথিবী এবং তা খুব দ্রুত। আর সেটাই আরও বেশি অভিশাপ হয়ে উঠছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে। উষ্ণতর হয়ে উঠছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া দায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য। সম্প্রতি উজ্জ্বলতা হারানোর কারণে চমকে উঠেছে গবেষকরা। কারণ বদলে যাচ্ছে মেঘ। পাতলা হচ্ছে। হচ্ছে বিবর্ণ।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।
কেন হারাচ্ছে ঔজ্জ্বল্য?
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, ১৯৯৮ থেকে ২৯১৭, এই ২০ বছরে পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্য প্রতি বর্গ মিটারে আগের বছরগুলির চেয়ে অর্ধেক ওয়াট করে কমে গিয়েছে। শতাংশের হিসাবে আগের বছরগুলির চেয়ে পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্য কমেছে ০.৫ শতাংশ। যার অর্থ, সূর্যালোক আগের চেয়ে নীলাভ এই গ্রহ কম পরিমাণে প্রতিফলিত করছে।
কেন এমন হচ্ছে, তার কারণও খুঁজে বার করেছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন, এই ২০ বছরে পৃথিবীর মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। তার ফলে, সেই মহাসাগরগুলির উপরের মেঘ আগের চেয়ে অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে।
মেঘের ঔজ্জ্বল্য হারানোর জন্যই পৃথিবী সূর্যালোক আগের চেয়ে কম পরিমাণে প্রতিফলিত করছে মহাকাশে। তাই সেই সূর্যালোক পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পৃথিবী কতটা সূর্যালোক প্রতিফলিত করছে, তা বুঝতে গবেষকরা খতিয়ে দেখেছেন পৃথিবী তার উপগ্রহ চাঁদকে কী পরিমাণে আলোকিত করছে।
সাধারণত, সূর্যালোকের ৩০ শতাংশ পৃথিবী প্রতিফলিত করে ফিরিয়ে দেয় মহাকাশে। গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, এই পরিমাণ ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ০.৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। আর সেটা কমেছে মূলত ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে।
মূল গবেষক নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ফিলিপ গুডে বলেছেন, প্রতিফলনের পরিমাণ কমে যাওয়ার তিন বছরের হিসাব দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবী হয়তো আরও বেশি পরিমাণে সূর্যালোক প্রতিফলিত করছে মহাকাশে। কিন্তু আমাদের গবেষণার ফলাফল উল্টো কথাই বলেছে।
গবেষকরা যে উপগ্রহ চিত্র ও তথ্যাদি বিশ্লেষণ করেছেন তাতে দেখা গিয়েছে, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উপরে একেবারে নীচের স্তরে থাকা মেঘ ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে বেশি পরিমাণে। ফলে সেই মেঘ থেকে সূর্যালোকের প্রতিফলনও আগের চেয়ে কমে গিয়েছে। এই অঞ্চলটিই পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্য কমার মূল কারণ হয়ে উঠেছে।
আরও দেখা গেছে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরের যে সব এলাকায় উজ্জ্বল মেঘের স্তর আগের চেয়ে পাতলা হয়ে গিয়েছে, সেই সব জায়গায় মহাসাগরের তাপমাত্রাও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমন হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য।
আর কতদিন বাসযোগ্য থাকবে পৃথিবী?
আজ থেকে ২৪০ কোটি বছর আগে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয় পৃথিবী। গড়ে ওঠে বায়ুমণ্ডল। যার ফলে সৌরজগতের এই একমাত্র গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটে। কিন্তু আরও ২০০ কোটি বছর পর সেই আগের মতো প্রাণহীন অবস্থা ফিরে যাবে পৃথিবী।
ফলে এখন থেকেই চলছে অন্য কোনও গ্রহে ঠাঁই নেওয়ার পরিকল্পনা। নাসার ‘নেক্সাস ফর এক্সোপ্ল্যানেট সিস্টেম সায়েন্স’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি গবেষণা এই সমস্ত কথা জানিয়েছে।
গবেষণাটির দুই মূল গবেষক আমেরিকার জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভূবিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্রিস রেনহার্ড ও জাপানের তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক কাজুমি ওজাকি জাবি অবশ্য বলছেন, সূর্যের তাপে ভস্মীভূত হওয়ার অনেক আগেই মিথেন গ্যাসে ভরে যাবে পৃথিবী।
অক্সিজেনের লেশমাত্র না থাকায় প্রাণ স্তব্ধ হয়ে যাবে আমাদের সাধের পৃথিবীতে। অবশ্য ততদিনে পৃথিবীর রং আর নীল থাকবে না। মঙ্গলের মতোই লালচে কিংবা ধূসর রঙে পর্যবসিত হবে।
উল্লেখ্য, যত দিন যাচ্ছে ততই এই পৃথিবী মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। আগামীতে এমনও দিন আসবে যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে শ্বাস নেওয়ার মতো অক্সিজেন থাকবে না হয়তো। আদতে পৃথিবীকে ঘিরে থাকবে না কোনও বায়ুমণ্ডলই।
সূর্যের প্রবল তাপে এবং ক্ষতিকর বিকীরণে ধ্বংস হয়ে যাবে ওজোন স্তর। বিরাজ করবে শুধু বিষাক্ত মিথেন গ্যাস। মানুষ তো বটেই, অল্প কিছু অণুজীব ছাড়া কোনও প্রাণী বা উদ্ভিদ বাঁচতে পারবে না এই গ্রহে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ