প্রাণঘাতী করোনা মহামারিতে সমগ্র বিশ্বের মানুষ দেড় বছর ধরে উদ্বিগ্ন। যদিও মাঝখানে করোনা সংক্রমণের ঢেউ অনেকটা নিচের দিকে ছিল। ওই সময়টায় টিকার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণও শুরু হয়েছিল। যদিও নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় ভ্যাকসিনের সরবরাহ কম। তারপরও মানুষ করোনার আতঙ্কে নিমজ্জিত রয়েছে।
এবার করোনাভাইরাস মহামারিতে নতুন এক আশাবাদের কথা জানা গেলো দুটি গবেষণায়। এই দুই গবেষণায় বলা হয়েছে, সংক্রমণ ও ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে কিছু মানুষের দেহে আমৃত্যু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে।
কী বলছে গবেষণা
অন্তত দুটি নতুন গবেষণায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষেরা আমৃত্যু রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন বলে আশাবাদের কথা উঠে এসেছে। যদিও, এটি পুনরায় আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় না। কিন্তু এতে মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডির তৈরির আশা দেখাচ্ছে।
গবেষণা দুটি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচার ও বায়োআর্কাইভ জার্নালে। করোনায় পুনরায় সংক্রমণের কারণে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সার্স-২ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি স্বল্পস্থায়ী কিনা। এ কারণে এই দুটি গবেষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকেই আশঙ্কা করছেন পুনর্বার ভ্যাকসিন নেওয়া লাগতে পারে ভেবে। যেমন- বার্ষিক বা ছয় মাস পর পর হয়তো ভ্যাকসিন নিতে হবে পূর্ণাঙ্গ ইমিউনিটি পাওয়ার জন্য।
এই দুটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, সাধারণ কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি অন্তত এক বছর স্থায়ী হচ্ছে। তাদের অনুমান, কিছু মানুষের শরীরে এই ইমিউনিটি কয়েক দশক পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গবেষকদের এই আশাবাদের ভিত্তি হলো তারা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে জড়িত বোন ম্যারোর সন্ধান পাওয়া। উভয় গবেষণাতেই গবেষকরা বোন ম্যারোতে ইমিউনিটি কোষের অনুসন্ধান করেছেন। এই কোষগুলো বোন ম্যারোতে বেঁচে থাকে এবং প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে।
গবেষণায় জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় এই অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। গবেষকরা ১১ মাস পর্যন্ত অ্যান্টিবডি শনাক্ত করেছেন। স্বস্তির জায়গা হলো, বোন ম্যারোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং ইমিউন ব্যবস্থার ক্রমাগত টি-সেল উৎপাদন করা। যা আসল সংক্রমণের কথা মনে রাখতে পারে এবং আবার আক্রমণ করতে এলে প্যাথোজেনকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, সার্স-২ ভাইরাসে কিছু অংশ রেখে দেয় ইমিউন ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ইমিউনিটি সেল নিজেকে বদলায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ নেয়। এটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে বোন ম্যারোর সংশ্লিষ্টতা আশাবাদ জাগায়, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের করোনা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও শরীর লড়াই করতে পারে।
গবেষণায় ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে ইমিউনিটি অর্জন করাদের চেয়ে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া মানুষদের ভবিষ্যতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ইউমিউনিটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে তাদের দেহে, যারা স্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন এবং পরে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাদের হয়তো কখনও বুস্টার নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়ালো
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত দুটোই বেড়েছে। গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে আজ সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমিত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ১ হাজার ৭১০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গতকাল রোববার করোনাভাইরাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪৪৪ জনের।
দেশে এ পর্যন্ত মোট করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৪০, মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৬১৯ জনের। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৪০ হাজার ৩৭২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ১৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ