বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কানাডাতেও নতুন করে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্ট্রিলসহ কয়েকটি সিটিতে লকডাউনও চলছে। এমনিতে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছেন কানাডাবাসী, এই আতঙ্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন। যা ঠেকাতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই কানাডার অন্টারিওতে ‘স্টে হোম অর্ডার’ রীতি মেনে চলতে হচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্ট্রিলসহ কয়েকটি সিটিতে লকডাউন চলছে। কানাডার প্রধান চারটি প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও, কুইবেক এবং আলবার্টায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, তবে জরুরি কিছু সার্ভিস চালু রয়েছে।
কানাডা সরকার দেশটির নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া নাগরিকরা যেন দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসে সেদিকেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন করে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিধিনিষেধ মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ফোর্ড বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরও বিধিনিষেধ আনতে যাচ্ছি। আবারও আমরা টরন্টোর তিনটি অঞ্চল, ইয়র্ক, পিল, কোভিডের ক্ষেত্রে যেখানে ৬০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে সেখানে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।’
অন্যদিকে কানাডায় টিকা সরবরাহ নিয়ে ফেডারেল সরকারের প্রতি আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড।
গত সপ্তাহে টিকা সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় তিনি একে তামাশা বলে মন্তব্য করেন। সরবরাহ বিলম্বের বিষয়টি ফেডারেল এমপিদের জানাতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান ডগ ফোর্ড।
অন্যদিকে কোভিড-১৯ কানাডাজুড়ে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাকে নজিরবিহীন চাপে ফেলে দিয়েছে এবং কানাডিয়ানদের জরুরিভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। আর এ সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থের সংকটে থাকা প্রদেশ, অঞ্চল ও মিউনিসিপালিটিগুলোর স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয়ের জন্য ৭২০ কোটি ডলার সংস্থানের উদ্দেশে একটি বিল এনেছে লিবারেল সরকার।
কানাডা হেলথ ট্রান্সফারের মাধ্যমে নতুন ৪০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হবে, যা মহামারির কারণে কানাডার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে পড়া থেকে সহায়তা করবে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেসনের জন্যও ১০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব করা হয়েছে বিলে।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, অর্থনীতি পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে কানাডিয়ানদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। ভ্যাকসিনের কর্মসূচিতে গতি এসেছে। এটা একটা ভালো দিক। তারপরও আমাদের চেষ্টা করতে হবে অধিক সংখ্যক কানাডিয়ানকে দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার।
কানাডার প্রিমিয়াররাও বাড়তি অর্থ সংস্থানের এ সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন। আগামীতে যাতে এটা অব্যাহত থাকে সে আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৪৫ হাজার ২ শত ৭৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ হাজার ২শ’ ৫১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৭ জন।
শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কায় সম্প্রতি বেশ কিছু দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত করে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানায়, এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। এই টিকার প্রয়োগ বন্ধ না করে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। পরে বিভিন্ন দেশের সাথে কানাডাও আবার এই টিকার প্রয়োগ শুরু করে।
কানাডায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগের অনুমতি পায়। দেশটিতে জনসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার–বায়োএনটেক ও মর্ডানার টিকা প্রয়োগেরও অনুমোদন রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ