অবশেষে পদত্যাগ করেছেন বৃটেনের বহুল বিতর্কিত সিটি মিনিস্টার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বিরোধী দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও বোন শেখ রেহানার মেয়ে। শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কেলেঙ্কারির খবর বোমার মতো ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও ডেভেলপার আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বৃটেনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তির নামে আরও একটি ফ্ল্যাট উপহার দেন আইনজীবী মঈন গণি। প্রকারান্তরে সেই ফ্ল্যাটও টিউলিপকে উপহার দেয়া হয়েছে। কারণ, রূপন্তি ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে পরিবার সহ ব্যবহার করতে দিয়েছেন। এসব বিষয় গোপন করেছেন টিউলিপ। শুধু তা-ই নয়, তিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি হওয়ার পরও তার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা কখনো করেননি বলে দাবি করেন। কিন্তু তার ব্লগ ফাঁস করে দিয়েছে মিডিয়া। তাতে দেখা যায়, তিনি শেখ হাসিনার জয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন। তার প্রচারণায় ছিলেন তিনি। এর বাইরে রাশিয়ার সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা, টিউলিপ, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রমুখ ৫০০ কোটি ডলার মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে আত্মস্মাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে বাংলাদেশে দুদক তদন্ত করছে। তদন্ত চলছে বৃটেনে। কিন্তু অভিযোগ উঠার পর দীর্ঘ সময় তা অস্বীকার করে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকেন টিউলিপ। তার পদত্যাগ দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা, বিরোধী কনজার্ভেটিভ দলের কিছু এমপি। কিন্তু টিউলিপ তার খালা শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতা ধরে রাখেন। এ নিয়েও অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার হলেন টিউলিপের ক্ষমতার খুঁটি।
তবে সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ নিজেই এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
গত আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকার আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসে। ওই অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এ তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর ওই ছবি এ সময় ফলাও করে প্রচার করে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান একজন বিরোধীদলীয় পার্লামেন্ট সদস্য। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর, সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতে থাকে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইনডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেছিলেন। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন। ওই তদন্ত চলার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ সিদ্দিক গত বছর লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর গত জুলাইয়ে তাঁকে ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেয় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকার।
গত বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ