ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বৃহস্পতিবার তাদের একটি গোপন মিশনের তথ্য প্রকাশ করেছে। যে অভিযানে ১২০ জন বিশেষ বাহিনীর (কমান্ডো) সদস্য মাত্র ৩ ঘণ্টায় সিরিয়ায় একটি ভূগর্ভস্থ ইরান-সমর্থিত ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস করেছে। ‘অপারেশন মেনি ওয়েজ’ নামের এই অভিযানটি গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পরিচালিত হয়।
‘ডিপ লেয়ার’ নামে পরিচিত অতি গোপন এই কারখানাটি সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের মাসিয়াফ এলাকায় অবস্থিত। অঞ্চলটি সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষার জন্য পরিচিত এবং কারখানাটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, ‘ডিপ লেয়ার’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পটি ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। যা লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার আসাদ শাসনের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ইরান তাদের কার্যক্রম ভূগর্ভে স্থানান্তর করে। ২০২১ সালের মধ্যে ৭০ থেকে ১৩০ মিটার গভীরে নির্মিত কারখানাটি সম্পূর্ণ কার্যকর হয়। কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০০ থেকে ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র, যা ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
অভিযানের প্রস্তুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল বছরের পর বছর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে এই মিশনের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর শালডাগ ইউনিট এবং ইউনিট ৬৬৯-এর সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেয়।
এর মধ্যে শালডাগ ইউনিট মূলত দীর্ঘ-পাল্লার অভিযান পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আর ইউনিট ৬৬৯ যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চারটি সিএইচ-৫৩ ‘ইয়াসুর’ হেলিকপ্টারে করে ১০০ জন কমান্ডো এবং ২০ জন মেডিক নিয়ে অভিযান শুরু হয়। সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নজর এড়াতে তারা ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। মাসিয়াফ অঞ্চলে পৌঁছে কমান্ডোরা গোপন কারখানাটির প্রবেশপথে বিস্ফোরক স্থাপন করে এবং প্রায় ৬৬০ পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরকের মাধ্যমে কারখানাটি ধ্বংস করে।
বিস্ফোরণে কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়, যা একটি ‘মিনি ভূমিকম্পের’ মতো কম্পন সৃষ্টি করে।
পুরো মিশনটি মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়। অভিযানে প্রায় ৩০ জন সিরীয় সেনা নিহত হয় বলে দাবি করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। যদিও সিরিয়ান মিডিয়া জানায়, ১৪ জন নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছে।
এই অভিযানকে সিরিয়া এবং ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী নজরদারী এবং আক্রমণাত্মক নীতির উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ