১৭ ফেব্রুয়ারি ১৬০০। বিজ্ঞান ইতিহাসের সবচেয়ে কালো দিন। ইতালির রাজধানীর রোমের ক্যাম্পে ডি ফিওরি স্কয়ার লোকে-লোকারণ্য। তামাশা দেখতে এসেছে সবাই।
বড় নিষ্ঠুর তামাশা। এক বেয়াদব ধর্মদ্রোহীকে পুড়িয়ে মারা হবে। এই বেয়াদবই নাকি আগে পাদ্রী ছিল। খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে বেয়াদবকে।
তারপর আনুষ্ঠানিকতা। ভ্যাটিক্যানের পোপের নির্দেশ পেয়ে যায় জল্লাদ। মশালের আগুন লাগিয়ে দেয় জীবন্ত তরুণের গায়ে। অকথ্য অত্যাচার, আগুনের লেহিহান শিখাও তাঁকে টলাতে পারেনি।পুড়ে ভস্ম হওয়ার আগমুহূর্তেও ছিলেন নিজের বক্তব্যে অটল। তিনিই বিজ্ঞানের প্রথম শহীদ —জিওর্দানো ব্রুনো।
কী এমন বলেছিলেন ব্রুনো, যে কারণে তাঁকে পোপের, পাদ্রীদের চক্ষুশুল হতে হলো, জলন্ত অঙ্গারে পরিণত হয়ে ভেসে যেতে হলো টিবের নদীতে?
তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। একথা তিনিই প্রথম বলেননি, তার আগের প্রজন্মের আরেক জ্যোতির্বিদ কোপার্নিকাস বলেছিলেন একই কথা। আরও প্রায় হাজার বছর আগে বলেছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টার্কাস।
এ তো চরম সত্যি কথা। এরজন্য কেন ব্রুনোকে মরতে হলো? এই চরম সত্যিটাকেই একসময় ভুল মনে করতেন পোপ, ভ্যাটিক্যানে, ইতালিতে, দুনিয়াজুড়ে মুর্খতার আসন গেঁড়ে বসা ভণ্ড পাদ্রীরা। এরজন্য অবশ্য দায় এড়াতে পারেন না আরো দুই বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল এবং টলেমি। অ্যারিস্টোটল বলেছিলেন পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আর চাঁদ-সূর্যসহ আকাশের সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই ঘুরত। অ্যারিস্টোটল গণ্যমান্য লোক। সারা দেশ তাঁকে মান্য করে। এমনকি রাজাও। তাই তার এই ভুল ধারণাই আসন গেঁড়ে বসে। তবে অ্যারিস্টোটল মহাবিশ্ব নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গিয়েছিলেন। গ্রিসের লোকেরা মনে করত পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো।
শুধু গ্রিসে নয়, গোটা দুনিয়াজুড়ে মানুষ জানত পৃথিবী চ্যাপ্ট। অ্যারিস্টোলই এই প্রথা ভাঙলেন। তাঁর অন দ্য হ্যাভেনস বইতে লিখলেন, পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো নয়। এটা একটা গোলক। কিন্তু লোকে সেটা মানবে কেন? অ্যারিস্টোটল তাঁর বইয়ে শক্ত যুক্তি দেখিয়েছিলেন। না মেনে উপায় ছিল না সেই বইয়ের পাঠকদের।
চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়? অ্যারিস্টোল বলেছিলেন সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী এসে পড়ে বলেই চন্দ্রগহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে ছায়া পড়ে চাঁদের ওপর, সেই ছায়া সবসময় গোলাকার। কখনো লম্বাটে হয় না, কিংবা উপবৃত্তাকারও হয় না। পৃথিবী যদি থালার মতো হতো তাহলে ছায়াটা উপবৃত্তাকারই হতো, গোলাকার নয়। কিন্তু আমরা তো গোলাকারই দেখি। অ্যারিস্টোটল বললেন, পৃথিবীর আকার গোলকের মতো বলে বলেই চন্দ্রগহণের সময় চাঁদের ওপর গোলাকার ছায়া পড়ে।
আরেকটা শক্ত যুক্তি দেখিয়েছিলেন অ্যারিস্টোটল সেই বইয়ে। সেই যুক্তির পক্ষে ছিল ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারাকে সবসময় আকাশের একই জায়গায় থাকে। ধ্রুবতারা থাকে উত্তর মেরুবিন্দুর ঠিক ওপরে। তাই উত্তর মেরু থেকে কোনো পর্যবেক্ষক যদি দেখেন, তিনি সবসময় মাথার ওপরেই দেখবেন ধ্রুবতারাকে।
কিন্তু কেউ যদি দেখেন বিষুব রেখা থেকে, তিনি দেখবেন ঠিক দিগন্ত রেখায় অবস্থান করছে ধ্রুবতারা। সে যুগে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করত বণিক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দিক ঠিক করতেন ধ্রুবতারা দেখে। তাদের কাছ থেকেই জানা যেত কোন দেশে ধ্রুবতারার অবস্থান কোথায়।
গ্রিকরা জানত উত্তর দিকের দেশগুলোতে দেখলে এই তারাকে আকাশের অনেক ওপরে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে একে নিচের আকাশে দেখা যায়। ধ্রুবতারার অবস্থানের এই তারতম্য থেকেও পৃথিবীর গোলাকৃতির বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়।
এখানেই থামলেন না অ্যারিস্টোটল। তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে ধ্রুবতারার অবস্থানের এই হেরফের থেকে পৃথিবীর পরিধি বের করার চেষ্টা করেছিলেন। আজকের মতো তখন মিটার, গজ, মাইলের মাপ ছিল না। তিনি পৃথিবীর পরিধি অনুমান করেছিলেন চার লক্ষ স্ট্যাডিয়া।
স্ট্যাডিয়ার মাপ আধুনিক মাপে কাঁটায় কাঁটায় কত, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু অনেক পণ্ডিত মনে করেন, এক স্ট্যাডিয়া ২০০ গজের সমান। যদি এটাই হয়, তাহলে পৃথিবীর পরিধির মান যত, অ্যারিস্টোটলের হিসাবে সেটা দ্বিগুণ ছিল।
পৃথিবী গোলকাকার এর পক্ষে আরো কিছু যুক্তি ছিল গ্রিক পণ্ডিতদের হাতে। সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য সাগরের উপকূলে যেতে হবে। তাকাতে হবে গবীর সমুদ্রের দিকে। আপনি হয়তো একটা জাহাজের প্রতীক্ষায় আছেন। দূরদেশ থেকে সেই জাহাজটা আসবে আপনার উপকূলে। নির্দিষ্ট সময় আপনি জাহাজটা দেখতেও পেলেন। কিন্তু সমুদ্রের বুকে দিগন্ত রেখায় আপনি প্রথমেই জাহাজের মাস্তুল দেখতে পাবেন না, দেখবেন জাহাজের মাস্তুল।
তারপর এগিয়ে আসবে তত জাজাজের কাঠামো ধীরে ধীরে দিগন্তের ওপর থেকে আপনার দৃষ্টিগোচরে আসবে। পৃথিবী যদি সমতল হতো, তাহলে জাহাজের গোটা দেহটাই একবারে দেখতেন, আগে মাস্তুল নয়।
পৃথিবী গোলকের মতো—এই মতটা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল অ্যারিস্টোটলের অনেক বড় সফলতা। কিন্তু প্রদীপের নিচে অন্ধকার বাস করে। অ্যারিস্টোটলের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল। পৃথিবীর আকার, মহাবিশ্বের আকার বুঝতে তাঁর ভুল হয়েছিল।
সেই ভুলটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় বিজ্ঞানের জন্য। তিনি বলেন, পৃথিবীর চারপাশে সূর্য আর সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ ঘুরছে। এমন মনে হওয়ার কারণ তাঁর কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস। তিনি বৃত্ত পছন্দ করতেন, তাই গোলকও পছন্দ করতেন। বৃত্তকেই তার কাছে সবচেয়ে নিখুঁত আকৃতি বলে মনে হতো। তাই বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনটাও তাঁর পছন্দের বিষয় হয়ে ওঠে। সেটা করাতে গিয়েই ভুলটা করলেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র ভেবে, সেটাতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে।
তাঁর কথার প্রতিবাদ করার লোক সেকালে ছিল না। তাঁর মতো করে জ্ঞানচর্চা করার লোক সেকালের গ্রিসদেশে কমই ছিল। তাই বলে একদম ছিল না তা নয়। গ্রিদেশেরই আরেক দার্শনিক অ্যারিস্টার্কাস বলেছিলেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়। কিন্তু তাঁর কথা আমলে নেয়নি গ্রিক সমাজ। অ্যারিস্টোটলের দোর্দণ্ড প্রতাপের কাছে হালে পানি পায়নি অ্যারিস্টার্কাসের তত্ত্ব। তাই সেটা বাতিল হয়ে যায়।
প্রথম খ্রিস্টাব্দে টলেমি এসে আরও জোরেশোরে প্রচার করলেন অ্যারিস্টোটলের তত্ত্ব। তিনি মহাবিশ্বের ছোটখাটো এক মডেল তৈরি করলেন। সেই মডেলে দেখানো হলো পৃথিবী কীভাবে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হয়ে মহাশূন্যে ভাসছে আর সূর্যসহ অন্য গ্রহ-নক্ষত্রগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে কীভাবে ঘুরছে।
তাঁর সেই মডেলে পৃথিবী ছিল মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। আর একে ঘিরে ঘুরত আটটা গোলক। প্রতিটা গোলক একেকটা গ্রহের ঘূর্ণন পথ তৈরি করেছিল। একেবারে শেষ গোলকে ছিল অন্যান্য তারাদের অবস্থান। তখন ইউরেনাস, নেপচুন কিংবা পুল্টো আবিষ্কার হয়নি। তাই টলেমির গোলকে ঠাঁই হয়নি এগুলোর। টলেমির মডেলের কিছু সফলতাও ছিল। টলেমির গোলকে অবস্থান নেওয়া বস্তুগুলি চালচলন, অবস্থানের ভবিষ্যদ্বাণী সফল করা করা সম্ভব হতো। সবচেয়ে বড় সফলতাটা আসে চাঁদের জন্য যে গোলক কল্পনা করেছিলেন টলেমি, সেটাতে। তার মডেলে চাঁদের গোলককটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেন, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পৃথিবীর কাছে আসে আরেকটা সময় পৃথিবী থেকে দূরে থাকে। আর যে সময় চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে, তখন তার আকারও অনেক বড় দেখায়। আর সাধারণ মানুষও এই ব্যাপারটা বুঝে যায়। অনেকেই তখন অ্যারিস্টোটল-টলেমির মডেলটা গ্রহণ করে। এরমধ্যে ছিল খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরাও। সূতরাং টলেমির মডেল তখন ধর্মীয় অনুসঙ্গে পরিণত হয়। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ে। এরপর ধর্মগ্রন্থ থেকে জ্ঞানচর্চা সর্বত্রই অ্যারিস্টোটল-টলেমির মডেলের জয় জয়কার। মানুষ তাঁদের মতকেই পবিত্র মত বলে মানে। হাজার বছর ধরে চলল এই ধারা। অ্যারিস্টোটল-টলেমিরই মহাবিশ্বের মডেল বাস করল মানুষের জ্ঞানরাজ্যে।
ষোড়শ শতাব্দীতে হলো প্রথম বিদ্রোহ। আর বিদ্রোহটা করলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস নামে এক পোলিশ পাদ্রী। তিনি পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের মডেলের বিরুদ্ধে মত দিলেন। বললেন, পৃথিবীর চারপাশে গ্রহ-নক্ষত্ররা ঘুরছে না, পৃথিবীই বরং সুর্যের চারপাশে ঘুরছে। ১৫৩০ সালে লিখলেন একটা বই। নাম ‘ডি রেভুলেশনিবাস অরবিয়াম কেলেস্তাম’ । অ্যারিস্টোটল-টলেমির মডেল কেন ভূল, সে ব্যাখ্যা দিলেন কোপার্নিকাস। কিন্তু বই প্রকাশ তিনি করলেন না। বুঝতে পারলেন, এই বই প্রকাশ হলে পোপ আর পাদ্রীদের রোষের মুখে পড়তে হবে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর তিনি বইটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৫৪৩ সালে প্রকাশ হলো সেটা। কিন্ত তাতে একটা বাক্য কোপার্নিকাসকে না জানিয়েই জুড়ে দিয়েছেন প্রকাশক। লিখেছেন, গ্রহ-নক্ষত্রের চলাচল ব্যাখ্যা করার জন্য এই সূত্র কাজে লাগে, আদতে এটা ঠিক নয়।
কোপার্নিকাস পোপের রোষে পড়তেন কী না কে জানে, এক বছরের মধ্যেই তিনি মারা যান। পোপের, প্রাদ্রীদের রোষ তাঁকে আর ছুঁতে পারে না। কিন্তু তাঁর বই রেহায় পায়নি। সেটাকে নিষিদ্ধ করে পোপের পাণ্ডারা। তারপর বহুদিন কেটে যায়। হয়তো হারিয়েই যেত কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রীক মহাবৈশ্বিক মডেল। সেটাকে আবার বাঁচিয়ে তুললেন জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার। তিনি ছিলেন এক কাঠি সরেস। সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরছে, একথা বলেই কেপলার দায়িত্ব শেষ করলেন না। তিনি বললেন সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতিসহ যেসব গ্রহগুলো ঘুরছে, তারা কেউই বৃত্ত পথে ঘোরে না। ঘোরে উপবৃত্তাকর কক্ষপথে।
আর্থাৎ অ্যারিস্টোলের পৃথিবীকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের ধারণা তো গুড়িয়ে দিলেনই, তাঁর প্রিয় বৃত্তাকার কক্ষপথের ধারণাও লুটিয়ে পড়ল। কেপলারের ব্যাখ্যার জবাব চার্চের কাছে ছিল না। আবার তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে পারে নি। তাছাড়া রোমের সম্রাটের মতো ভীরু ছিলেন না প্রাগের সম্রাট রোদলফ। তিনি কেপলারকে স্নেহ করতেন, তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজও করতে দিয়েছিলেন। কিন্তু অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না ইতালির বিখ্যাত গ্যালিলিও গ্যালিলি। কী করেছিলেন গ্যালিলিও, তাঁর পরিণতিই বা কী হয়েছিল?
গ্যালিলিও কোপার্নিকাস আর কেপলারের মতের ওপর দাঁড়িয়ে বললেন, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। আর পৃথিবী আর পাঁচটা গ্রহের মতোই সাধারণ গ্রহ ছাড়া কিছু নয়। শুধু তত্ত্ব আর ব্য্যাপ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি গ্যালিলিও। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক বিজ্ঞনচর্চার পুরোধা।
ইতালির এক চশমা বিক্রেতা সেময় টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। সেটাকে ঠিক টেলিস্কোপ বলা যায় কিনা, সেটা তর্কের ব্যাপার। কিন্তু সেই টেলিস্কোপই আধুনিক টেলিস্কোপের জন্ম দিয়েছিল।
কীভাবে কীভাবে জানি সেই টেলিস্কোপের খোঁজ পান গ্যালিলিও। তিনি সেটা দেখে, পর্যবেক্ষণ করে নিজের মতো করে আরো উন্নত টেলিস্কোপ তৈরি করলেন। সেই টেলিস্কোপ দিয়েই পর্যবেক্ষণ করলেন বৃহস্পতি গ্রহ। দেখলেন বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে বেশ কয়েকটি উপগ্রহ।
এই ঘটনায় আরেকবার ভিত কাঁপিয়ে দিল অ্যারিস্টোটল-টলেমির মহাবৈশ্বিক মডেলের। তাঁদের মডেলে একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সব গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ ঘুরতে পারত। আর কোনো গ্রহের বা নক্ষত্রের এই মর্যাদা ছিল না। তারমানে অ্যারিস্টোটল-টলেমি মডেলে নিষিদ্ধি ছিল অন্য কাউকে কেন্দ্র করে কোনো উপগ্রহের ঘোরাও। গ্যালিলিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, অন্য গ্রহকে কেন্দ্র করেও উপগ্রহেরা ঘুরতে পারে। সূতরাং অ্যারিস্টোটল-টলেমি তত্ত্ব যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
সেটা আরও বেগবান হলো। গ্যালিলও একসময় ফলাও করে প্রচার করলেন সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরছে। অন্যদিক থেকে আওয়াজ তুললেন তরুণ পাদ্রী জিওর্দানো ব্রুনো। ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হলো।
আর একই অপরাধে বিচার হলো গ্যালিলিওর। গ্যালিলিও প্রথমে নিজের ভুল স্বীকার করে ওয়াদা করেছিলেন, তিনি এই ধর্মবিরোধি কথা আর প্রচার করবেন না। সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেন। কিছুদিন সূর্যের ঘোরার বিষয়টি নিয়ে টু শব্দটিও করলেন না। কিন্তু গোপনে মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গেলেন, বই লিখলেন। সে কথা চার্চ এবং পোপের কান পর্যন্ত পৌঁছতে দেরি হলো না। আবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো গ্যালিলিওকে। বিচারে গ্যালিলিও প্রাণ বাঁচানোর জন্য দোষ স্বীকার করলেন। শেষমেষ ১০ বছরের কারাদণ্ড হলো। অন্ধকার নোংরা কুঠুরিতে, আধপেটা খেয়ে না খেয়ে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করলেন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। কিন্তু তাঁর কাজ অমর হয়ে রইল। ধোঁয়াসায় মোড়ানো মহাবিশ্বকে উন্মুক্ত করার পথ তিনিই বাতলে দিয়ে গেলেন।
আপনার মতামত জানানঃ