নভেম্বর মিরপুরের কালশীতে বসুমতী পরিবহনের একটি বাস পোড়ানো হয়। বাস পোড়ানোর ভিডিও করে সেই ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে।
আগুন দেওয়ার বিনিময়ে অগ্নিসংযোগকারীরা পান ৭ হাজার টাকা। বাস পোড়ানোর মূল হোতা এবং বাসে আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কালশীর বসুমতী বাসে আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তারেরা হলেন আল মোহাম্মদ চাঁন, মো. সাগর, মো. আল আমিন ওরফে রুবেল ও মো. খোরশেদ আলম। তাঁরা সবাই স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানায় র্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল সোমবার রাতে র্যাব-৪-এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮ নভেম্বর বসুমতী পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারেরা স্থানীয় যুবদলের কর্মী। তাঁদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করেন।
পরবর্তী সময়ে ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার চাঁন ও তাঁর সহযোগী সাগর ও আলামিনসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধাজনক স্থানে সুবিধামতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রেকি করেন।
গ্রেপ্তার আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য তাঁর বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ওই দিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেন।
পরে গ্রেপ্তারেরা ওই দিনই রাত ১১টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করেন। এ সময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতী পরিবহনের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় গ্রেপ্তার চাঁনের নির্দেশে সাগর ও আল আমিন বাসের কাছে যান এবং গ্রেপ্তার আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রল ঢেলে দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগর ও আল আমিন পালিয়ে যান।
এ সময় চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের ওপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা দেওয়াসহ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। অন্য কোনো বিরোধী দলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারেন সে জন্য চাঁন বাসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাঁকে পাঠাতে বলেন।
পরে চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠান। এই কাজের জন্য চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও তিনি সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে দেন। মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তাঁরা এসব নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাঁদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে পাঠাতেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, আল মোহাম্মদ চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া সে নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতেন ও টাকা সংগ্রহ করে সকলের মাঝে বিতরণ করতেন।
গ্রেপ্তার মো. সাগর চাঁনের সহযোগী। তিনি চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। মো. আল আমিন হলেন চাঁনের সহযোগী ও সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তিনি চাঁনের নির্দেশে কালশী সড়কে বসুমতী পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদকসংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। খোরশেদ আলম চাঁনের সহযোগী।
তিনি চাঁনের নির্দেশে বসুমতী পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে চাঁনকে পাঠান। এ ছাড়া তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোনো প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন এবং এসব ভিডিও গ্রেপ্তার চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে পাঠাতেন।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান খন্দকার আল মঈন।
আপনার মতামত জানানঃ